ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

র‍্যাগিংয়ে জড়ালেই শাস্তি পাবেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী

র‍্যাগিংয়ে জড়ালেই শাস্তি পাবেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩ | ১৯:৪১

র‍্যাগিংয়ে জড়ালেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে কোনো বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ফৌজদারি বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান এতে সই করেন।

এ নীতিমালা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। বুলিং ও র‍্যাগিং নীতিমালা কার্যকর ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন প্রতিষ্ঠান-প্রধানরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বুলিং ও র‍্যাগিং বিষয়ে পরিবীক্ষণ এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
জারি করা নীতিমালায় বলা হয়েছে– সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট কোনো শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁকে কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁদেরকে ‘কাউন্সেলর’ হিসেবে অভিহিত করা হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি থাকবে। কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী; এমনকি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর হবে। এ নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সব প্রতিষ্ঠান-প্রধানকে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সমকালকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হতো, তা এখন নেই বললেই চলে। নীতিমালার কারণে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক নির্যাতন করা হতো, তা অবশ্যই বন্ধ হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিখন পদ্ধতিতে এই নীতিমালা খুব সহজেই বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন তিনি।


বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানের করণীয় সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বুলিং এবং র‍্যাগিং উৎসাহিত হয় এ রূপ কোনো কার্যকলাপ, সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব জায়গায় বুলিং ও র‍্যাগিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেসব জায়গায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (আবাসিক হলসহ) কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে বুলিং ও র‍্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করবে; অন্যথায় নিষ্ক্রিয়তার জন্য দায়ী করা হবে। বুলিং ও র‍্যাগিংয়ের উদাহরণ এবং পরিণতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে এবং প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণা চালাবে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে এক দিন ‘বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে বুলিং ও র‍্যাগিংয়ের কুফল সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ-সংশ্লিষ্টদের সচেতন করার কথাও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শপথ নেবেন। শপথ পালনের অঙ্গীকারনামায় পরোক্ষভাবে বুলিং ও র‍্যাগিং করবেন না; কাউকে বুলিং ও র‍্যাগিংয়ের শিকার হতে দেখলে রিপোর্ট করবেন; প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলেও স্বাক্ষর করতে হবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বুলিং ও র‍্যাগিংয়ের কুফল সম্পর্কিত সিনেমা, কার্টুন, টিভি সিরিজের প্রদর্শন, অনলাইনে দায়িত্বশীল আচরণের ব্যাপারে সম্পর্কিত কর্মশালাসহ সহপাঠ্যক্রমিক কর্মশালা আয়োজনের ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের ‘এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ’-এ অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করবে। শিক্ষার্থীরা বুলিং-র‍্যাগিংয়ের কুফল কিংবা এর ফলে কীভাবে একজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য এবং সে সঙ্গে বুলিং ও র‍্যাগিং সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান তারা নিজেরাই বের করতে উদ্যোগী হবে।

আরও পড়ুন

×