ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

‘র‍্যাপিড ক্যাশ’ অ্যাপে ঋণ দিয়ে অভিনব প্রতারণা, আটক ২৭

‘র‍্যাপিড ক্যাশ’ অ্যাপে ঋণ দিয়ে অভিনব প্রতারণা, আটক ২৭

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩ | ১৮:০৬ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ | ০৮:৩৭

‘র‍্যাপিড ক্যাশ’ নামের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কথিত ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে লোকজনকে ফাঁদে ফেলত একটি চক্র। এরপর ঋণের সুদের নামে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। কেউ দিতে আপত্তি করলে তাঁর ফোন থেকে হাতিয়ে নেওয়া গোপন ছবি–তথ্য প্রকাশের হুমকি দিত। এতে বাধ্য হয়ে তাদের দাবি করা টাকা দিতেন অনেকে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসা চক্রটির প্রধান মহিউদ্দিন মাহিকে মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।

এটিইউ’র পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ আসলাম খান সমকালকে বলেন, ‘দুই দিনের ধারাবাহিক অভিযানে প্রথমে সোমবার চক্রের সাত সদস্যকে আটক করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গতকাল মাহিসহ ১৯ জনকে আটক করা হয়। তাদের সবাই প্রতারণায় জড়িত কি না সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।’

এটিইউ’র সাইবার ক্রাইম শাখার পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘র‍্যাপিড ক্যাশ একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন। এই অ্যাপটি মোবাইল ফোনে ইনস্টল করার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় প্রতারক চক্রের হাতে। তারা ফোন থেকে ব্যবহারকারীর সব ফোন নম্বর, গ্যালারির ছবি–ভিডিওসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়। দেশের যেকোনো মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে অ্যাপটির রেজিস্ট্রেশন করা যায়। আর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পরপরই র‍্যাপিড ক্যাশ ব্যবহারকারীকে ৫০০ বা এক হাজার টাকার ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হয়। সেদিন থেকেই ঋণের টাকার ওপর প্রায় ১০০ টাকা হারে সুদ আরোপ করে তারা। ঋণ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই তা পরিশোধ অথবা সুদের টাকা দেওয়ার জন্য র‍্যাপিড ক্যাশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হয়। কোনো গ্রাহক যদি এই উচ্চহারে সুদ দিতে আপত্তি করেন, তবে তাকে বিভিন্নভাবে প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইল করা হয়। কখনও ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ব্যবহারকারী নিজের সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে যখন ঋণ ও সুদের টাকা দিতে সম্মত হন, তখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়। ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, কেউ কেউ পুরো টাকা পরিশোধের পরও তাদের জোর করে আরও ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের টাকা ও সুদ পরিশোধে বাধ্য করা হয়। এজন্য ভয়-ভীতিও দেখানো হয়।’

এটিইউ’র এই কর্মকর্তা জানান, সাইবারক্রাইম উইং এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। প্রথমে দুজন এজেন্টকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং পরবর্তী অনুসন্ধানের মাধ্যমে চক্রের মূল হোতা মাহির সন্ধান পায় এটিইউ। জানা যায়, মাহির নেতৃত্বে চক্রটি উত্তরা–১১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসার পঞ্চম তলার কার্যালয় থেকে এই প্রতারণা করে আসছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ওই বাসায় অভিযান চালায় এটিইউ। এ সময় চক্রের মূলহোতা মাহিসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অ্যাপ ব্যবহার করে ঋণ দেওয়া এবং টাকা ফেরত দিতে লোককে বাধ্য করার কথা স্বীকার করেছে।

তিনি জানান, অনুসন্ধানে দেখা যায়, চক্রের সদস্যরা কোনো একটি অ্যাপ বেশি দিন পরিচালনা করেন না। যখনই কোনো অ্যাপ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসতে পারে বলে সন্দেহ হয়, তখনই তারা অ্যাপ বন্ধ করে এবং নতুন নামে একই ধরনের অপকর্ম শুরু করে।

আরও পড়ুন

×