মুরাদনগরে নিপীড়ন
সেই নারীর ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ

ফাইল ছবি
কুমিল্লা ও মুরাদনগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ২২:৪২
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর সেই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞরা। তবে পুলিশ বলছে, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা না হলেও ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণ করতে তারা এখন ডিএনএ পরীক্ষার দিকে এগোচ্ছেন। এ বিষয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে শিগগিরই ডিএনএ নমুনা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন সমকালকে বলেন, আমরা ঘটনার পর ওই নারীর কাপড়সহ কিছু আলামত জব্দ করেছিলাম। আদালতের অনুমতি নিয়ে শিগগিরই এসব আলামত ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।
উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট শিল্পী সাহা বলেন, ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব বুঝিয়ে ঘটনার পরদিনই পরীক্ষা করানোর দরকার ছিল। এখন দেরিতে হলেও ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষাসহ তাঁর বস্ত্রের ডিএনএ নমুনা দেওয়া জরুরি। না হলে মামলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ত্রুটি থেকে যাবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শারমীন সুলতানা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ওই নারীর কাছ থেকে জব্দ করা ডিএনএ নমুনা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো দরকার। আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকি, ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে যেন দেরিতে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য না আনা হয়। এতে অনেক পরীক্ষায় ফল মেলে না।
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, অপরাধীদের সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করে ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ করা সম্ভব।
এদিকে ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলী পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন থাকলেও নারীকে নির্যাতন ও ভিডিও ভাইরালকাণ্ডে গ্রেপ্তার চার আসামির আজ রিমান্ড শুনানি হতে পারে। পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই নারীকে নির্যাতন, ভিডিও ধারণসহ ভাইরালকাণ্ডে জড়িত অধিকাংশই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের আটক করতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াও তাদের ছবি নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
‘জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, মুরাদনগরে সেই নারীর প্রতি যে নির্মম বর্বরতা চালানো হয়েছে, এতে আমরা মর্মাহত। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক, সবাই গ্রেপ্তার হবে।
বুধবার বিকেলে উপদেষ্টা মুরাদনগরে পৌঁছে কবি নজরুল মিলনায়তনে প্রশাসন ও সুধী মহলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তবে সভায় ওই নারীর পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। মতবিনিময় সভায় নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপের কথা জানানো হয়।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা। এ সময় শারমিন এস মুরশিদ তাঁকে বলেন, সরকার আপনার পাশে আছে। সব নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহায়তাও প্রদান করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত সব আসামিকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা মতিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল মালিক, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান প্রমুখ।
রাজধানীতে প্রতিবাদ সমাবেশ
মুরাদনগরের ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাজধানীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জোবায়দা পারভীন।
এ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতাকে রাজনীতিকীকরণ করে বিচার ব্যাহত করার চেষ্টা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সমাজকল্যাণ উপপরিষদের সম্পাদক হুমায়রা খাতুন, নিজেরা করির সারাবান তহুরা প্রমুখ।
- বিষয় :
- ধর্ষণ