ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ

প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে ফের অস্থিরতা

প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে ফের অস্থিরতা

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩ | ১৮:০০

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ার দেড় মাসের মাথায় আবারও প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের সমর্থনপুষ্ট অ্যাডহক (অস্থায়ী) ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম দেলোয়ার হোসেন বুধবার জাকির হোসেনকে বরখাস্ত করে চিঠি দেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আখলাক আহম্মেদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন।

এর প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে অভিভাবকরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শাখার শিক্ষকরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। মনিপুর স্কুলের আটজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের মধ্যে সাতজনই জাকির হোসেনের প্রতি সমর্থন জানান। শিক্ষকরা সবাই আখলাক আহম্মেদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব না নিতে অনুরোধ জানান। শিক্ষকদের দাবির মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন আখলাক আহম্মেদ।

বিকেলে কামাল আহমেদ মজুমদার প্রতিষ্ঠানটির মূল বালিকা শাখায় যান। তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন। আখলাক আহম্মেদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে তাঁর নির্দেশেই বসানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ যারা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, তাঁরা যদি আগামীকাল ক্লাসে না ফেরেন, তাহলে সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব, মামলা করব।’ এ সময় জাকির হোসেনকে জামায়াত-শিবিরের লোক বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

সকালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও বিকেলে প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আখলাক আহম্মেদ ফের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি চাই এই প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা অব্যাহত থাকুক। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলন এবং শিক্ষার স্বার্থে ইস্তফা দিয়েছিলাম। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এবং শিক্ষকদের একাংশের দাবির মুখে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করেছি। শিক্ষকরা চাইলে দায়িত্ব পালন করব।’

মনিপুর স্কুলের প্রশাসনিক সমন্বয়ক মো. রাশেদ কাঞ্চন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে জাকির হোসেনের নিয়োগ বৈধ। উচ্চ আদালত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের  নির্দেশে তিনি এ দায়িত্ব নিয়েছেন। করোনাকালে বেতন কমিয়ে শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়েছেন।

মিজানুর রহমান নামে আরেক শিক্ষক বলেন, ভুয়া বিল-ভাউচারে সই করেননি জাকির হোসেন। তাঁর অবস্থান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এ জন্যই তাঁকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে কমিটির লোকজন। প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদা হক সাবিনা বলেন, ‘আমরা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে আন্দোলন করছি।’

এদিকে, গতকাল আদালত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের দেওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আখলাক আহমেদের দায়িত্ব ও জাকির হোসেনকে অব্যাহতি প্রদানের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে জাকির হোসেনের দায়িত্ব পালনে বাধা থাকল না।

বিকেলে জাকির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, আদালতের রায়ে তাঁকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র অধিদপ্তরের। অ্যাডহক কমিটির সভাপতি তাঁকে অব্যাহতির যে পত্র দিয়েছেন, তা স্থগিত করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন

×