কুরিয়ার সার্ভিসে মাদক বহন থামছে না

কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বহন করা হচ্ছে - প্রতীকী ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩ | ০৪:১৬ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ | ০৪:১৬
কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য আনা-নেওয়া বন্ধ হচ্ছে না। এটাকে ‘নিরাপদ’ মাধ্যম মনে করছেন অনেক মাদক কারবারি। বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বহন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী কারবারিদের সহযোগিতা করছেন। বিভিন্ন সময় এসব মাদকের চালান ধরা পড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এ অবস্থায় কুরিয়ার সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। মাদক পাচার ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এরই মধ্যে ১০টি সুপারিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এতে মাদক বা অবৈধ পণ্য আনা-নেওয়া করা হলে সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কুরিয়ার সার্ভিস থেকে বিভিন্ন সময় মাদকের একাধিক চালান জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গন্তব্যে নেওয়ার পথেও আটকের ঘটনা ঘটেছে। তবে মালিক বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা জব্ধ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের (ডিএনসি) ফরিদপুর জেলা কার্যালয়। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে এগুলো এনেছিলেন মাদক কারবারি সাইফুল ইসলাম। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার ননীক্ষীর এলাকায়। তিনি টেকনাফে গিয়ে ইয়াবা সংগ্রহ করতেন। ৩ মে সেখানকার এক কারবারির কাছ থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা কেনেন তিনি। কারবারিকে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। ইয়াবাগুলো একটি স্কুল ব্যাগে নিয়ে সড়ক পথে চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রাম থেকে আরও ৪৯টি স্কুল ব্যাগ কেনেন। একটি ব্যাগে কৌশলে রাখেন ইয়াবা। স্কুল ব্যাগ হিসেবে ইয়াবার চালানটি সন্দুরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ শাখায় বুকিং দেন ৪ মে। তাঁর ফোন নম্বর এবং তাঁর নামেই বুকিং দেওয়া হয়। প্রাপক হিসেবেও তাঁর নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। সুন্দরবন কুরিয়ারের মাদারীপুরের টেকেরহাট শাখা থেকে চালান উত্তোলন করার কথা ছিল। চালান বুকিং দিয়ে তিনি রাতেই রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশে। এরই মধ্যে ডিএনসির ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গোপন সংবাদের মাধ্যমে চালানের তথ্য জানতে পারেন। ৫ মে বিকেলে হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাইফুলকে। তাঁর পকেটে বুকিংয়ের কাগজ ছিল। তাঁর দেওয়া তথ্যে ইয়াবার চালান জব্ধ করা হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৯ কেজি গাঁজাসহ ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, এর সঙ্গে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত আছেন কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
২০২০ সালের আগস্টে গুলশান লিংক রোডে ডিএইচএল নামের আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস থেকে সাড়ে তিন হাজার পিস ইয়াবা জব্ধ করে ডিএনসি। ট্রাভেল ব্যাগের মধ্যে এই ইয়াবা পাচার করা হচ্ছিল বিদেশে।
এসব কারণে গত ১৮ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একটি চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে ১০টি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে– সব কুরিয়ার সার্ভিসকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে হবে। পার্সেল বুকিংয়ের সময় প্রেরক-প্রাপকের পুরো নাম-ঠিকানা, ছবি, রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল ফোন নম্বর ও পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে সংরক্ষণ করতে হবে কুরিয়ার সার্ভিসকে। মাদক পরীক্ষার স্ক্যানার মেশিন বসাতে হবে। পার্সেল বুকিংয়ের আগে এ মেশিনে পরীক্ষা করতে হবে। পার্সেলে সন্দেহজনক কিছু মনে হলে দ্রুততম সময়ে ডিএনসির হটলাইনে জানাতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, কারবারিরা মাদক আনা-নেওয়ায় কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে পদপেক্ষ নেওয়া হচ্ছে। নজরদারি কঠোর করা হয়েছে।