‘বাবাকে ছুঁয়ে দেখতে চাই, হাত ধরে ঈদগাহে যেতে চাই’

দশ বছর বয়সী আহাদ হোসেন তার বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়। বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যেতে চায়। তার বাবা চঞ্চল হোসেন নিখোঁজ ২০১৪ সাল থেকে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর উদ্যোগে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে আহাদ তার বাবার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবসকে ( ২৬ জুন) সামনে রেখে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এ সময় আরও কয়েক শিশু তাদের আকুতির কথা জানায়। ঈদের আগেই বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায় আহাদসহ অনেকে। 

মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা আক্তারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের কারও স্বজন নিখোঁজ হয়েছেন পাঁচ বছর আগে, কারও ক্ষেত্রে এক যুগ পেরিয়ে গেছে। কেউ কেউ বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তি অপরাধী হলে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার করুন।

অররা ইসলামের বাবা সাজেদুল ইসলাম নিখোঁজ হয়েছেন ২০১৩ সালে। কাঁদতে কাঁদতে অররা বলেছে, ‘আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই, আমার বাবাকে যদি মেরে ফেলে থাকেন, তাহলে লাশটা একটু দেখতে দিন। আমি আমার বাবার লাশটা দেখতে চাই। আমি বাবাকে শেষবারের মতো একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই।’ এ ছাড়া ২০১৬ সালে গুম হওয়া আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রাইসা, ২০১৩ সালে গুম হওয়া কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার, ২০১৪ সালে গুম হওয়া মফিজুল ইসলামের ছেলে সহিদুল ইসলাম, ২০১৯ সালে গুম হওয়া আনিস ইসলামের মেয়ে ইনাশা, সোহেল হোসেনের মেয়ে শাফা হোসেন, ২০১৫ সালে গুম হওয়া নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, ২০১৯ সালে গুম হওয়া ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান এবং ২০১৩ সালে গুম হওয়া মাহবুব হাসানের ভাই জাহিদ খান বক্তব্য দেন।

নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম অভিযোগ করেন, তাঁদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন কয়েক দফায় গিয়ে জানতে চেয়েছে, নুর আলম কোথায়? তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণের করা হচ্ছে কেন?’ এ সময় অনেকে বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তির খোঁজ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেল বলা হয় তিনি বিদেশ চলে গেছেন, অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে মরেছেন। এভাবে উপহাস করা হয়।

মায়ের ডাকের অন্যতম সমন্বয়কারী সানজিদা আক্তার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে গুম-খুনের সঙ্গে যুক্তদের অন্তর্ভুক্ত না করার আহ্বান জানান। তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধিদের গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের প্রতি যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে, তার প্রতিকারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। 

মানবাধিকার কর্মী নুর খান সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘এক যুগের বেশি সময় ধরে আমরা বলে আসছি গুম হওয়া মানুষদের পরিবারগুলো দুর্বিষহ যন্ত্রণায় অমানবিক জীবনযাপন করছে। এখন তাদের কাছেই গুমের তথ্য চেয়ে উপহাস করা হচ্ছে। যে মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তাদের নানাভাবে চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে। এই অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।’ মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন মায়ের ডাকের অপর সমন্বয়কারী মনজুর হোসেন।