বিশেষজ্ঞ মত
জনগণকে নিয়ে কমিটি করুন

ডা. লেনিন চৌধুরী
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
বাংলাদেশে ২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। তারপর থেকে প্রতিবছর কমবেশি ডেঙ্গু দেখেছি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে সবচেয়ে বড় ডেঙ্গু মহামারি হয়। সাধারণ সময়ে আবাসিক ধরনের মশা বা এডিস ইজিপ্টাই জাতের মশায় ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়ে থাকে। যখন মহামারি হয়, সেই অঞ্চলের এডিস এলবোপিক্টাস জাতের মশাও মহামারির বাহক হয়ে যায়। ২০১৯ সালের পর দুই ধরনের মশাই ডেঙ্গুর বাহক হয়ে গেছে।
এখন আমরা যে রোগীগুলো পাচ্ছি, তাঁরা মূলত দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হওয়া। সাধারণভাবে কোনো একটি ধরন দ্বারা রোগী আক্রান্ত হলে সেই ধরনের বিরুদ্ধে রোগীর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। সেটা সারাজীবনের জন্য তৈরি হয়। কিন্তু তখন সেই রোগী চার ধরনের অন্য ধরন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। আক্রান্ত হলে রোগের লক্ষণ ও তীব্রতা বেড়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না দেওয়া হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এবার যত রোগী মারা গেছেন, হাসপাতালে ভর্তির কমবেশি তিন দিন পর তাদের মৃত্যু হয়েছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার চরিত্র ও চালচলন বদলে গেছে। আগে এটি সকালে ও সন্ধ্যায় মানুষকে কামড়াত। কিন্তু এখন সারাদিন, এমনকি রাতেও কামড়ায়। বিশেষ করে উজ্জ্বল আলোর বাসায় দিনরাতের ভেরিয়েশন বদলে গেছে– এটা একটা ব্যাপার।
এবার লক্ষণও বদলে গেছে। আগে তীব্র জ্বর ও ব্যথা হতো। এখন দেখতে পাচ্ছি, জ্বর কম– ১০১ বা ১০২ ডিগ্রি অথবা জ্বর নেই। রোগী পাতলা পায়খানা করছে, বমি করছে এবং পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু। তাহলে ডেঙ্গুর লক্ষণ বদলাচ্ছে। যে রোগী মারা যাচ্ছে তাদের একটি অংশ ডেঙ্গু সংক্রমণে। আরেকটি অংশ কিডনি ফেইলিয়র এবং ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্সড অর্থাৎ শরীরে লবণ বা সোডিয়াম-পটাশিয়াম কমে গেলে। শরীরে হৃদযন্ত্রের জটিলতাও দেখতে পাচ্ছি।
সব মিলিয়ে ডেঙ্গু বাড়ছে, এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ কাজে সিটি করপোরেশন এখনও সফল হতে পারেনি। আমরা মনে করি, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে কমিটি করা উচিত। যেটা ঝোপঝাড় বাগান পরিষ্কার থেকে শুরু করে যুগপৎভাবে এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
আমরা জানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দু’দিন বন্ধ থাকে। বন্ধের সময়ে যেন কোথাও পানি না জমতে পারে এবং তাতে মশা প্রজনন না হয়, সেজন্য টয়লেট ও কমোডগুলো ঢেকে রাখতে হবে। একই সঙ্গে অন্য প্রাণী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তা না হলে আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে মশা বহন করে যদি শরীরে ছড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা আক্রান্ত হবো। অন্যদিকে গণপরিবহনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। পানি জমতে না দেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যুগপৎ কাজ করার মাধ্যমে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
- বিষয় :
- বিশেষজ্ঞ মত