ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইবিতে বিবস্ত্র করে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ ২ ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে

ইবিতে বিবস্ত্র করে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ ২ ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে

ফাইল ছবি

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৭:৫০ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৭:৫৪

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থীকে গণরুমে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এসময় বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর। এদিকে মঙ্গলবার বিষয়টি তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আকতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়।

গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের একটি গণরুমে (১৩৬) এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, র‍্যাগিংয়ের এ ঘটনায় অভিযুক্তরা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের কর্মী। তারা হলেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের মুদাচ্ছির খান কাফি ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সাগর।

ভুক্তভোগী জানায়, ঘটনার দিন তাকে মধ্যরাতে হলের ওই গণরুমে ডাকেন অভিযুক্তরা। এসময় পরিচয় পর্বের নামে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তারা। কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতেও বাধ্য করেন। পরে একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেন। এছাড়াও নাক দিয়ে খত দেওয়া এবং রড দিয়ে আঘাত করা হয় তাকে।

পরে শাখা ছাত্রলীগের নেতারা বিষয়টি মিমাংসা করে দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কোনো অভিযোগ জানাননি ওই শিক্ষার্থী। এদিকে গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে কোনো র‍্যাগিং ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি বলে আবেদনপত্র জমা দেন ভুক্তভোগী। তবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আকতার হোসেন এবং প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ।

এদিকে ছাত্রলীগের মিমাংসার বিষয়ে সংগঠনের প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মী জানান, ঘটনার পরে ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান হাফিজ ও নাসিম আহমেদ মাসুম ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় এলাকায় ভুক্তভোগীর সামনে অভিযুক্তদের ডাকেন। এসময় তাদের (অভিযুক্ত) চড় থাপ্পড় মারেন ও ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন।

পরে র‍্যাগিংয়ের বিষয়টি পুনরায় মিমাংসা করতে রাতে লালন শাহ হলে অভিযুক্তদের নিয়ে বসেন শাখা ছাত্রলীগ সিনিয়র কর্মী শাহিন আলম, নাসিম আহমেদ মাসুম ও লিখন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে দেন তারা। এবিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন আলম বলেন, ‘সিনিয়র ও জুনিয়রের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমরা বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি।’

অভিযুক্ত সাগর র‍্যাগিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি সেদিন বাইরে ছিলাম।’ অন্য অভিযুক্তকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।  

এ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগে সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘হলের শিক্ষার্থীরা সবাই ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে আসে, সবাই কর্মী। তবে কারও ব্যক্তিগত কর্মের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।’

হল কতৃপক্ষের অফিস আদেশে বলা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে সংগঠিত র‍্যাগিংয়ের মৌখিক কিংবা লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী প্রক্টরের মাধ্যমে অবহিত হওয়ায় তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ঘটনার তদন্তে হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক আলতাফ হোসেনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক আব্দুল হালিম, অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন এবং সদস্য সচিব হলের সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমান। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

গত বছরের জুন মাসেও একই হলের গণরুমে এক নবীন শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিলেও ছাত্রলীগ নেতাদের মিমাংসায় অভিযোগ তুলে নেন সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

এর আগে ক্যাম্পাসে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে পাঁচ ছাত্রীকে আজীবন বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরও পড়ুন

×