ভার্চুয়াল আদালত চালুর প্রস্তাব ডিসিদের
সম্মেলনের তৃতীয় দিন

প্রতিকী ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৪ | ০০:৫৭ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ | ০৮:০২
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের তৃতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১২টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক অধিবেশন হয়েছে। এসব বৈঠকে শতাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ডিসিদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তদারকি জোরদার, গুজব প্রতিরোধে সহযোগিতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী ও সচিবরা। সরকার-সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর জট নিরসনের বিষয়েও তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। বিশেষ করে বাজার ব্যবস্থা যদি কেউ অস্থিতিশীল করে বা মজুত করে, তাহলে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে করোনাকালে চালানো ভার্চুয়াল আদালত আবারও চালু করার প্রস্তাব।
গতকাল প্রথম অধিবেশনের পর ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের কয়েদিদের আদালতে আনা-নেওয়ায় অনেক সময় অসুবিধা হয়। আবার বয়স্ক বন্দিও থাকে। এজন্য করোনাকালের মতো ভার্চুয়াল আদালত সারাদেশে আবারও চালু করা যায় কিনা, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা বলেছেন। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে দেখবেন কী করা যায়। মন্ত্রী আরও বলেন, ইয়াবার মতো যেসব মাদক পরিবহন সহজ, সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। ভয়াবহ মাদক এলএসডি এসেছে সম্প্রতি। যারা জানে না, তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
‘সিভিল-মিলিটারি অনেক তফাত ছিল’
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছেন, একসময় সিভিল-মিলিটারি অনেক তফাত ছিল, এখন আর নেই। আগে যেমন পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান বিভাজন করা হতো, সেটা আর নেই। সামরিক বাহিনীর এবং জনপ্রশাসনের সৌহার্দ বেড়েছে। মিয়ানমার প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আগ্রাসী হতে চাই না কোথাও। ওখানে সিভিল প্রশাসন কাজ করছে, বিজিবি কাজ করছে। সেনাবাহিনী এখনও কাজে নামেনি, কারণ ওখানে যুদ্ধ লাগেনি এখনও।’ জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে জরুরি প্রয়োজনের সময় সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহারের সুযোগ বাড়ানো, সীমান্ত এলাকায় পাশের দেশ থেকে ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া ঠেকানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে বলেও জানান তিনি।
রাজাকারের তালিকা প্রসঙ্গ
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ডিসিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজাকারের তালিকা তৈরির কাজটি জটিল। কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারা কাজ করছে। তালিকা জমা দিলে তা প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরনিবাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে কোনো ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়া নিয়ে গেলে ডিসিরা যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন, তা বলা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে
বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। মামলাজট নিরসনে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে একটা মামলা আছে, সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পণ্য মজুত করে কেউ বাজার অস্থিতিশীল করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন করা হয়েছিল। এ রকম কাজ করলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগুনের ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য প্রসিকিউশনকে যে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন, সেটা দেওয়া হবে।
সার্বক্ষণিক ইটিপি পর্যবেক্ষণ করতে ডিভাইস বসানো হবে
দেশে বর্তমানে আড়াই হাজার এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) আছে জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এসব ইটিপি স্মার্ট মনিটরিং ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। ডিসিদের সঙ্গে কারখানার বর্জ্য পরিশোধনে ইটিপি ব্যবহার নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইটিপি অনেকের আছে, কিন্তু চালায় না। যখন কোনো পরিদর্শক যাওয়ার খবর কারখানা কর্তৃপক্ষ পায়, তখনই চালু করে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ হবে। সেজন্য একটি ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। এ সপ্তাহে সেটা গেজেট আকারে প্রকাশ করব। সামনে যে সময়টা আসছে মার্চ মাসসহ সেই সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে।’
ডিসিদের পক্ষ থেকে কী প্রস্তাবনা ছিল জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার বন্ধে কী ব্যবস্থা নিতে পারি, আমরা আরও কঠিন হতে পারি কিনা। আমরা বলেছি, পরিকল্পিত শিল্প এলাকা ছাড়া কোথাও গ্যাস এবং বিদ্যুতের সংযোগ দেব না।’
গুজব প্রতিরোধে ডিসিদের চার পরামর্শ
গুজব প্রতিরোধে চারটি কৌশলগত বিষয় নিয়ে কাজ করতে জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সাইবার নিরাপত্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ করার জন্য চারটি কৌশলগত বিষয়ে সচেতনভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কৌশলগুলো সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল ও এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, যেসব আইন রয়েছে সেগুলো প্রয়োগ করা, পুলিশ প্রশাসন যাতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে, তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কথা হয়েছে।
নিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালগুলোই শুধু থাকবে
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, গুজব প্রতিরোধে তৃণমূল পর্যায়ের তথ্য দিয়ে ডিসিরা সহযোগিতা করতে পারেন। অনিবন্ধিত অনলাইনগুলো গুজব বেশি ছড়ায়। সবাইকে একটা নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। শুধু নিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালগুলোই থাকবে। জেলা প্রশাসকরাও বলেছেন, গোটা দেশের গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা বজায় থাকা দরকার, সাংবাদিকদের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা দরকার, গণমাধ্যমকর্মী আইন খুব শিগগির করা দরকার। কেবল অপারেটরদের প্রসঙ্গে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, অপারেটররা যা খুশি দিয়ে দেয়, সেগুলো সঠিক কিনা। ক্লিনফিডের বিষয়গুলো ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, ডিসিরা এসব বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন।
নারীকর্মীদের বিদেশ পাঠাতে কাঠামো তৈরি করা হবে
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন বলেছেন, নারীকর্মীদের বিদেশ পাঠানোর ক্ষেত্রে একটা কাঠামো তৈরি করা হবে, যাতে তারা একটা সুস্থ পরিবেশে কাজ করতে পারেন। ডিসিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। এ সময় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
- বিষয় :
- ডিসি সম্মেলন