রওশনের নেতৃত্বে আরও একটি জাতীয় পার্টি

.
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ০০:১৩ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ০৭:০৬
আজ শনিবার রওশন এরশাদের অনুসারীদের সম্মেলন হবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙবে জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত কয়েক নেতা থাকছেন না সম্মেলনে। তারা পক্ষ বদল করে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপায় ফিরতে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু রওশনের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেউ যাচ্ছেন না। বিএনপির কাউকে আমন্ত্রণ করা হয়নি।
জি এম কাদেরের জাপা রওশনের সম্মেলনকে গুরুত্ব না দেওয়ার কথা বলছে বারবার। তবে গত দেড় মাসে রওশনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতাদের কাছে টেনেছেন জি এম কাদের। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভরাডুবির কারণে যেসব নেতা বিক্ষুব্ধ ছিলেন, তাদেরও পক্ষে টেনেছেন। রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং রওশনের ঘোষিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসিহও থাকছেন না সম্মেলনে।
না থাকার কথা রাঙ্গা নিজেই জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজনীতি করলে জাতীয় পার্টির মূলধারায় ফিরবেন। গোলাম মসিহ কথা বলেননি। রওশনের মুখপাত্র সুনীল শুভরায় সমকালকে বলেছেন, তারা সম্ভবত থাকছেন না সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে কারা আসবেন, তা নিশ্চিত নয়।
গত ২৮ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে সম্মেলন। সারাদেশ থেকে কাউন্সিল, ডেলিগেট আসবে বলে জানিয়েছেন রওশনপন্থিরা। তবে জাপার কোন কোন জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা আসবেন, তা নিশ্চিত নয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। রওশন সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এর মাধ্যমে জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল হতে যাচ্ছে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই জাপা দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়। বিরোধী দলের নেতার পদ পেয়ে জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেন রওশন। তিন বছর পর সমঝোতা ভেঙে যায়। জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি। পাল্টা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরাতে চেষ্টা করেন জি এম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে টিকে যান রওশন। তাঁর পক্ষ নিয়ে জি এম কাদেরকে কুকথা বলায় জাপা থেকে বহিষ্কার হন রাঙ্গা।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারি মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের। তবে কয়েক মাস পরে তা ভেঙে যায়। জাপা ফের বিরোধী দল হবে, জি এম কাদের হবেন বিরোধী দলের নেতা– এই দুই শর্ত পূরণের আশ্বাসে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয় জাপা। এতে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন রওশন। তাঁর অনুসারীদের কাউকে মনোনয়ন দেননি জি এম কাদের। ভোটের পরও সরকারের সমর্থন পাচ্ছেন না তিনি।
দ্বাদশ নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে জাপা। ভোটের পর দলটিতে ফের অস্থিরতা শুরু হয়। লাঙ্গলের পরাজিত প্রার্থীরা সভা করে অভিযোগ তোলেন, জি এম কাদের ভোটে গিয়ে টাকা পেলেও অন্যদের দেননি। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় না পাওয়া, ছাড় পেয়েও হেরে যাওয়া নেতারা জি এম কাদেরের সমালোচনায় মুখর হন।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহহিয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। তারা সবাই রওশনের পক্ষে যোগ দিয়েছেন। দল থেকে বাদ পড়াদের নিজের পক্ষে টেনেছেন রওশন।
পরাজিত প্রার্থীদের সভায় যোগ দেওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সালাহউদ্দিন মুক্তিসহ অনেকেই জি এম কাদেরের পক্ষে ভিড়েছেন। জাপা চেয়ারম্যান কাউকে পদোন্নতি, অব্যাহতি দেওয়া কয়েক নেতাকে স্বপদে দলে নিয়ে অবস্থান শক্ত করেছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, জহিরুল আলম, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, জহিরুল ইসলাম রুবেল, ইমরান হোসেন মিয়া ফিরেছেন জি এম কাদেরের পক্ষে। তারা গত বুধবার জাপার যৌথসভায় ছিলেন।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেছেন, ১০টা সম্মেলন করুক অসুবিধা কী। জাতীয় পার্টি নামে চারটি দল আছে। আরেকটি হতে যাচ্ছে। তাতে কিছু যায় আসে না। লাঙ্গল যার, আসল জাতীয় পার্টি তার। লাঙ্গল জি এম কাদেরের।
রওশন ঘোষিত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ বলেছেন, সম্মেলনে নির্বাচিত নেতৃত্ব লাঙ্গল পেতে চেষ্টা করবে। রওশনের নেতৃত্বের জাপাই আসল।
- বিষয় :
- জাতীয় পার্টি
- রওশন এরশাদ