ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

প্রথম দিনেই জমজমাট চকের ইফতার বাজার

প্রথম দিনেই জমজমাট চকের ইফতার বাজার

ছবি- সমকাল

ইয়াসির আরাফাত

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪ | ২২:২৩

পবিত্র রমজান মাস ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে পুরান ঢাকায়। বাহারি পদের ইফতারসামগ্রী বানানোর রেওয়াজ ঘরে ঘরে। তার মানে এই নয় যে বাইরের ইফতার চলবে না। এখানকার ভোজনরসিক বাসিন্দাদের বড় অংশ বিকাল হতেই হাজির হন চকবাজারে। শাহি মসজিদের সামনের সড়কটির নাম চক সার্কুলার রোড। পুরো রাস্তার দু’পাশে মুখরোচক নানা খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। মঙ্গলবার প্রথম রোজায়ও দেখা দিল সেই চিরচেনা রূপ।

শাহি মসজিদের সামনের সড়কে দোকানগুলোতে মোটাদাগে রয়েছে শরবত, মাঠা, ছোলা, ঘুগনি, বিভিন্ন ধরনের পরোটা, কাবাব, আস্ত মুরগি-কোয়েল, সাসলিক ও টিক্কা কাবাব। আছে জালি কাবাব, সিঙাড়া, সমুচা, পরোটাও। কিমা পরোটা (চিকেন) ৭০ টাকা, গরুর মাংসের পরোটা ৮০ টাকা ও মিষ্টি পরোটা ৪০ টাকা।

বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, সবজির পাকোড়া ও ডিম চপের দাম ঢাকার যে কোনো জায়গার চেয়ে চকে কম। একটু বড় আকৃতির পেঁয়াজু, বেগুনি ও আলুর চপ পাঁচ টাকা করে। অথচ ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় এগুলো ১০ টাকা করে বিক্রি হয়। চকবাজার সড়কের ভিড় ঠেলে এগোলে চোখে পড়বে ঘুগনি, ছোলা আর পরোটার দোকান।

বড় বাপের পোলায় খায় ৮০০, বিফ কাবাব ১৪০০ টাকা

মুরগির মাংস, কিমা, মগজ, কলিজা, চিড়া, ডাল, সুতি কাবাব, আলু, ডিমসহ ১০ থেকে ১২টি মসলার সমন্বয়ে তৈরি ইফতার পদের নাম বড় বাপের পোলায় খায়। চকবাজার সড়কের মাঝ বরাবর যুগ যুগ ধরে প্রতিবছর রোজায় চকবাজারে এই পদের খাবার নিয়ে বসেন মোহাম্মদ হোসেন। জনাদশেক সহকারী নিয়ে বেশ জমিয়েছেন তিনি। ৮০০ টাকা কেজি দরের এই পদ অধিকাংশ মানুষ আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে নিচ্ছেন। এ ছাড়া গরুর কাবাবের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি।

আলাউদ্দিন সুইটমিটের সামনে দইবড়া বেচেন হারুনুর রশীদ। কোন বাটি কত– জানতে চাইলে বলেন, ‘১০ বছর ধরে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। জিনিসের দাম বাড়লেও আমি কিন্তু বাড়াইনি। সবাই এক রকম নয়।’

শুধু যে পুরান ঢাকার মানুষ ভিড় করে ইফতারি কিনছেন, তা নয়। ইফতারসামগ্রী কিনে ফিরছিলেন মোবাশ্বের ইসলাম। ছেলেকে নিয়ে ভিড় পেরিয়ে রিকশায় বসে হাসিমুখেই বললেন, ‘প্রথম রোজায় পরিবারের সবাই মিলে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার খাব, এ জন্য এসেছিলাম। অনেক মানুষের চাপাচাপি হলেও যা যা চেয়েছি নিতে পেরেছি।’

নামি দোকানেও ক্রেতার কমতি নেই

বোম্বে কনফেকশনারি, আনন্দ, ডিসেন্ট পেস্ট্রি শপ ও আমানিয়া হোটেলের ইফতারসামগ্রীর দাম অনেক বেশি। সেখানেও ক্রেতার অভাব নেই। ভিড় ঠেলে আনন্দ কনফেকশনারিতে গিয়ে দেখা যায়, হালিমের ক্রেতাদের জটলা। মাটির সরার আকৃতিভেদে ৩০০, ৬০০ ও ১২০০ টাকা। রোজাদাররা ২০০ টাকা লিটার লাবাং আর ৩৬০ টাকা লিটারের জাফরানি শরবত নিচ্ছেন অনেকটা পানির বোতল কেনার মতো করে।

চড়া দাম হলেও শাহি জিলাপিরও বিক্রি হচ্ছে বেশ। শাহি মসজিদের ২ নম্বর গেটের মুখে দেখা মিলল তাঁর। একেকটা এক কেজি, আধা কেজি ও ৭০০ গ্রাম ওজনের জিলাপি সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। উচ্চমূল্যের বিষয়ে বিক্রেতা মো. কাউছার বলছিলেন, ‘ঘিয়েভাজা অরিজিনাল জিলাপি নিতে হলে আমার কাছেই আসতে হবে।’

মোহাব্বতি শরবতের হাঁকডাক

তরমুজ, রুহ আফজা আর দুধ-চিনির মিশ্রণে তৈরি মোহাব্বতি শরবতের কাটতি যেমন তেমন, বিক্রেতারা এর নাম ধরে হাঁকডাক দিচ্ছেন জোরেশোরে। সঙ্গে রয়েছে মাঠা, পেস্তা বাদামের শরবত, জাফরানি শরবত ও লাবাং।

সাংবাদিক-ইউটিউবারের ভিড়

রমজানের প্রথম দিন সাংবাদিক-ইউটিউবারদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতার চেয়ে সংবাদকর্মীর সংখ্যা কোনো অংশে কম ছিল না। এতে অনেক ক্রেতাকে বিরক্তি প্রকাশ করতেও দেখা যায়। তবে বিক্রেতারা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

×