ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সংরক্ষণে গলদ, কার্যকারিতা হারাচ্ছে ওষুধ

সংরক্ষণে গলদ, কার্যকারিতা হারাচ্ছে ওষুধ

ছবি: ফাইল

 তবিবুর রহমান 

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:৫৪ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪ | ১১:১৭

তাপপ্রবাহ চলছে সারাদেশে। এদিকে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং থাকছে দীর্ঘ সময় ধরে। এসব কারণে দোকানে নির্দেশিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ওষুধের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। সংরক্ষণের বিষয়ে দোকানিদের নানা পরামর্শ দিয়ে গত বছরের মে মাসে চিঠি দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে তদারকি না থাকায় পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। শুধু দোকানে নয়, সরকারি সংরক্ষণ ব্যবস্থায়ও অনেক ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ৯০ শতাংশ ওষুধের মোড়কে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওষুধ সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হবে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা প্রয়োজন– এমন ওষুধ মাইনাস ৪ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হবে। দেশে জাতীয় ওষুধ নীতিতেও ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দোকানের নিবন্ধন দেওয়ার বিধান নেই। তবে বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।

ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি। এর মধ্যে ৫২৮টি দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে বেশির ভাগ দোকানে সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ফার্মাসিউটিক্যাল প্রফেশনালসের (বিএসপিপি) ভাইস প্রেসিডেন্ট আনসারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকলে ওষুধের গুণগত মান কমে যায় বা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কার্যকারিতা কমে যায়। এই ওষুধ রোগ সারাতে পারে না। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করলেও ওষুধের দোকানিরা তা করছেন না। এগুলো তদারকির দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। তবে জনবল কম থাকায় তারা সঠিকভাবে তদারকি করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সাইয়েদুর রহমান বলেন, ওষুধের ক্ষেত্রে টানা ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে এমন তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। 

এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ওষুধের ক্ষেত্রে তালিকা দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, টিকা সংরক্ষণ ক্রয় ও বিক্রয়ে সতর্ক হতে হবে।

ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম ফারুখ বলেন, দেশের ফার্মেসিগুলোতে ৯০ শতাংশ ওষুধ ঠান্ডা জায়গায় রাখা হচ্ছে না। আমরা বারবার বলে আসছি, ফার্মেসিগুলোতে যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে। তা না হলে দোকানদারের অজান্তেই ওষুধের মান নষ্ট হয়ে যায়। টিকা, ব্লাড প্রডাক্ট, বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনস্টিক কিট বেশি ঠান্ডায় যেমন ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। এ বিষয়গুলো আমাদের দেশে মানা হচ্ছে না, অধিকাংশ দোকানে রেফ্রিজারেটর নেই। এভাবে চলতে থাকলে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। তিনি আরও বলেন, শুধু ওষুধের দোকানে নয়, সরকারি ওষুধ সংরক্ষণে অনেক ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। ওষুধ রুম টেম্পারেচারে রাখার জন্য যে আধুনিক স্টোর ব্যবস্থা থাকার কথা, তা আমাদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় নেই। টিকাজাতীয় ওষুধ সংরক্ষণে রুম টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণের আধুনিক ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় মেয়াদ থাকলেও ওষুধের রং পরিবর্তন হয়ে যায়, এমনকি গলে যায়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করি। এখনও গুরুতর সমস্যা পাইনি। বেশির ভাগ ওষুধের দোকানে এসি, ফ্যান আছে। ফ্যান চালু রাখলেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে দীর্ঘ লোডশেডিংয়ে কিছুটা প্রভাব পড়ছে।’

আরও পড়ুন

×