ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বিএনপিপন্থি আইনজীবী সংগঠন ফাটলের মুখে

বিএনপিপন্থি আইনজীবী সংগঠন ফাটলের মুখে

ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬:৪০

বিএনপি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঘরোয়া বিভেদ এখন সর্বসমক্ষে চলে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের দায়িত্ব নেওয়ার পটভূমিতে তাঁকে ফোরাম থেকে অব্যাহতির পর দ্বন্দ্ব আর ছাইচাপা দেওয়া যায়নি। 

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, দীর্ঘদিন অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এখন ফাটলের মুখে। ফোরাম এখন দু’ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ বলছে, ব্যারিস্টার খোকনকে অব্যাহতি দেওয়ায় ফোরামের কোনো ক্ষতি হবে না। অন্যপক্ষ বলছে, সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ ঘটনার সূত্রপাত। যে কোনো সময় দুই গ্রুপের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, দলের আইনজীবীদের মধ্যে এ বিভেদ প্রভাব ফেলছে বিএনপির মধ্যেও। দলেও দ্বিধাবিভক্তি দেখা গেছে। অনেকে ব্যারিস্টার খোকনের পক্ষে, অন্যরা ব্যারিস্টার কায়সার কামালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি এ ইস্যুতে গত সোমবার স্থায়ী কমিটির সভাতেও আলোচনা করেন নেতারা। 

সেখানেও বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত হয়। কয়েকজন সদস্য বলেন, এটি আইনজীবী ফোরামের এখতিয়ার। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার সুযোগ নেই। অন্যদিকে অন্তত তিনজন সদস্য বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিএনপিপন্থি সংগঠন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এর নেতৃত্বে রয়েছেন। এ সংগঠন নিয়ে বিএনপিকেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। মূলত নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে কোন্দল সৃষ্টি বলেও তারা মনে করছেন। তারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বেশ কয়েকজন আইনজীবীর বিতর্কিত ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেন। 

সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার খোকনসহ নির্বাচিত চারজনকে দায়িত্ব না নিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে– এমন অজুহাত দেখিয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলন শুরু করার আহ্বানও জানানো হয়েছিল। তবে ব্যারিস্টার খোকন সেদিকে যাননি। দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে তিনি সভাপতির দায়িত্ব নেন। এ কারণে গত শনিবার ব্যারিস্টার খোকনকে ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
 
বহিষ্কার নিয়ে যা বললেন ব্যারিস্টার খোকন

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট বারের ১ নম্বর হলরুমে ব্যারিস্টার খোকন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফোরাম থেকে তাঁকে বহিষ্কারের কোনো ভিত্তি নেই। বারের নির্বাচনের সময় ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে অংশ নিই। সে নির্বাচনে আমরা ১৪ পদের মধ্যে ১২টিতে জয়ী হতাম। কিন্তু কায়সার কামাল বার নির্বাচনে সরকারের প্যানেলের পক্ষে কাজ করায় আমরা সভাপতিসহ চারটি পদে জিতেছি। অব্যাহতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফোরাম থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই। কারণ ফোরামের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। গঠনতন্ত্র ছাড়া সংগঠন থেকে এর আগে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের বহিষ্কারও ঠিক হয়নি। সংবাদ সম্মেলনের পুরো সময়েই ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে নিয়ে নানা বিষয়ে সমালোচনা করেন খোকন। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এটা ফোরামের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে এক সময় ছিলাম, এখন নেই। তাই এটা নিয়ে ভাবছি না।

এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল  বলেন, ব্যারিস্টার খোকন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। তিনি যে ফোরামকে সমর্থন করেন, সেই ফোরামের সিদ্ধান্তেই বারের সভাপতি পদে মনোনয়ন পেয়েছেন। ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কামালকে নিয়ে তিনি যে বিষোদ্গার করেছেন, তা খুবই দুঃখজনক। সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়া কারও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। সভায় সব সিনিয়র আইনজীবীর উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সমকালকে বলেন, ব্যারিস্টার খোকন আমার বড় ভাই। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। তাঁর বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা আমার ব্যক্তিগত নয়; ফোরামের সর্বজনীন সিদ্ধান্ত।  

একাধিক সূত্র বলছে, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন ব্যারিস্টার খোকন। খালেদা জিয়ার সঙ্গেও ব্যারিস্টার খোকনের যোগাযোগ রয়েছে। এই দু’জনের সম্মতি নিয়েই তিনি ফোরামের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন। 

আরও পড়ুন

×