ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আজ চুকনগর জেনোসাইড দিবসের ৫৩ বছর

আজ চুকনগর জেনোসাইড দিবসের ৫৩ বছর

চুকনগর স্মৃতিসৌধ। ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪ | ০৪:৪৮

মানব ইতিহাসের এক বৃহত্তম ট্র্যাজেডি বুকে বয়ে খুলনা জেলার চুকনগর প্রান্তরটি আজ ৫৩ বছর পূরণ করেছে। একাত্তরে দেশজুড়ে যে গণহত্যা চলেছিল, সেটি আজও জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়নি। আর ইতিহাসের স্বল্প সময়ে বৃহত্তম একাত্তরের চুকনগর গণহত্যা তো পরের কথা।

ঘটনার শুরু সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। চুকনগর হলো ভদ্রাসহ আরও কয়েকটি সমুদ্রগামী নদীর সঙ্গমস্থল। একাত্তরের এপ্রিল-মে মাসে পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচারে এবং স্থানীয় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে অতিষ্ঠ দক্ষিণ বাংলার নিপীড়িত লাখ লাখ সাধারণ সনাতন ধর্মাবলম্বী একযোগে দেশান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ সম্বল নিয়ে তারা চলমান শরণার্থী হিসেবে নদী পথে সীমান্তের নিকটবর্তী চুকনগর অঞ্চলে সমবেত হন। রাতে তারা দলে দলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশান্তরী হতে থাকেন। এভাবে চুকনগর ট্রানজিট প্রান্তে হাজার হাজার শরণার্থী জমা হতে থাকে। স্থানীয় পাকিস্তানপন্থী ও অবাঙালি বাস ড্রাইভারদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সাতক্ষীরা পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটি থেকে ১৯৭১ সালের ২০ মে সকালে একটি মিলিটারি ট্রাক ও জিপে করে একদল সেনা এসে অপেক্ষমাণ ও ক্রন্দনরত অসহায় মানুষগুলোর ওপর গুলিবর্ষণ করে। তাদের হাতে প্রথম শহীদ হন কৃষক ইনসান আলী। এরপর চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে এদের বুলেট ও গুলিগোলা চলে। সাধারণ মানুষ এখনও মনে করে, সেদিন লাখ শরণার্থী হতাহত হয়েছেন। পরে গবেষকদের অনুমিত হিসেবে শহীদদের সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার বলে ধরা যায়। এত নাম মনে রাখবে কে? সমাহিত করা হবে কোথায়? তখন সব লাশ চুকনগর বাজারের পাশে বয়ে যাওয়া ভদ্রা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটায় সে লাশ মাসখানেক পর্যন্ত ভাসতে থাকে।

এমন বিশাল হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি আবার বাংলাদেশের মানুষজনও ভালো করে জানেনি। ২০২২ সালের ২০ মে এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনাটি দেশজুড়ে তুলে ধরার উদ্যোগ নেন কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা। 

এবার ‘আমরা একাত্তর’র প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হিলাল ফয়েজীর নেতৃত্বে চুকনগর অভিযাত্রী দল শিশু-কিশোর, তরুণ সমাবেশ, স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্পণ এবং ভদ্রা নদীতে হাজার হাজার পুষ্প-পাপড়ির শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হিলাল ফয়েজী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের উদ্যোগে চুকনগরে পৃথিবীর বৃহত্তম স্মৃতি প্রান্তর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা করি।

‘আমরা একাত্তরের’ চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান বলেন, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা একটি মানোন্নত জরিপ কাজ হাতে নিয়েছি। এই বিশাল গণহত্যা যজ্ঞের স্থান একটি বিশাল স্মৃতি প্রান্তর দাবি করতেই পারে।

আরও পড়ুন

×