১৪ দল থাকা না থাকা প্রসঙ্গ
সিদ্ধান্ত আ’লীগের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে শরিকরা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক আজ

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪ | ০০:৪৩ | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ | ০৭:৩২
জোট থাকবে কি থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার আওয়ামী লীগের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছে ১৪ দলের শরিকরা। জোটের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কিনা, সে বিষয়েও ১৪ দলের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগকেই ভেবে দেখতে হবে বলে মনে করছে তারা। তবে জোট রাজনীতি অব্যাহত রাখতে হলে অবহেলা ও অবমূল্যায়নের অবসান ঘটিয়ে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা চাইছেন এসব শরিক দলের নেতা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আজকের বৈঠকেও জোট প্রশ্নে এমন কঠোর মনোভাব তুলে ধরবে শরিক দলগুলো। সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে জোটের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনের সাড়ে চার মাস পর এই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ১৪ দল। এর আগে নির্বাচনের আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর জোট শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয় নিয়ে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে ১৪ দলীয় জোটের প্রতিটি শরিক দলের দু’জন করে শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এবং সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন নেতাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তারা কী বলবেন, সে বিষয়ে এরই মধ্যে নিজেরাও এক দফা পরামর্শ সেরে নিয়েছেন শরিক নেতারা। গত মঙ্গলবার সকালে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের রাজধানীর বনানীর বাসায় অনানুষ্ঠানিক সভা করেছেন তারা। যেখানে মেনন ছাড়াও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোহাম্মদ আলী ফারুকসহ জোটের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
অনানুষ্ঠানিক ওই সভায় নেতাদের বক্তব্যে জোটের মধ্যকার চলমান অবহেলা ও অবমূল্যায়ন বিষয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা উঠে আসে। এ সময় জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পরই নিজেদের কথা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন নেতারা। নিজেদের বক্তব্যে জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা– সে বিষয়েও ভেবে দেখতে বলবেন তারা। এ ছাড়া জোট ধরে রাখতে হলে প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার দাবি তুলে ধরা হবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে পরবর্তী সময়ে আবারও নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও বলেন কয়েকজন নেতা। পাশাপাশি দুঃসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনগণের দুর্ভোগ, অর্থনৈতিক সংকট এবং ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতি, লুটপাটসহ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতেও প্রধানমন্ত্রীকে তাগিদ দেবেন নেতারা।
এর আগে থেকেই ১৪ দল, বিশেষ করে জোটের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক ডেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং জোটের ভবিষ্যৎ ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিল জোটের শরিক দলগুলো। তারা মনে করছে, নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময় শরিকদের প্রতি অবহেলা ও অবমূল্যায়নের অবসানেই এমন বৈঠকের দরকার ছিল। কিন্তু সেই দাবি গত সাড়ে চার মাসেও পূরণ না হওয়ার বিষয়টি আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে শরিকদের।
এ বিষয়ে রাশেদ খান মেনন সমকালকে বলেন, বৈঠকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনব। তারপর সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। নিশ্চয়ই ১৪ দলের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে প্রথমে আমরা ১৪ দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য শুনব। এর পর আমরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরব।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ১৪ দল থাকবে কিনা, সেটা জোটনেত্রী শেখ হাসিনা ও জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগকেই ভাবতে হবে। জোট রাখা আমাদের চেয়ে তাদেরই বেশি প্রয়োজন। আমরা এগুলোই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলার চেষ্টা করব।
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনার পর আমরাও আমাদের কথাগুলো বলব।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ দল গঠন হয়। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ ২৩ দফা কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিয়ে এই জোট যাত্রা শুরু করে। একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের অঙ্গীকারও ছিল এই জোটের। তবে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সরকারে জোট শরিকদের কয়েকটি মন্ত্রিত্ব দেওয়া হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ অনেকটাই ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে চলছে। ফলে ২০১৯ সালে তৃতীয় দফায় গঠিত সরকারের পর এবার চতুর্থ মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিপরিষদেও শরিক দলের কোনো নেতার ঠাঁই মেলেনি।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করে। সে সময় জোটের তিন শরিক দলকে মাত্র ছয়টি আসনে নৌকা প্রতীকে ছাড় দেওয়া হয়। যার মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হন শরিক প্রার্থীরা। সর্বশেষ গত ২ মে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শিগগির ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানান।
- বিষয় :
- ১৪ দল