মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার
‘কেউ প্রমাণ করতে পারবে না এমপিদের নেতৃত্বে লুট হয়েছে’

ছবি- সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪ | ১৭:৪৭ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ | ১৯:৫০
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোয় অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করেছে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রা। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কেউ প্রমাণ পারবে না এমপিদের নেতৃত্বে লুট হয়েছে। এগুলো বলে বাজার নষ্ট করা হয়েছে। কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবে না যে, এমপিরা এটা করেছে।
এদিকে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই দাবি করে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দীন হাজারী বলেছেন, এমপিদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর কাজ পাওয়া ছিল কাকতালীয়। শুধু এমপিদের এজেন্সি নয়, ১০১ এজেন্সি কর্মী পাঠিয়েছে।
মঙ্গলবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বায়রার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতা দুই এমপি।
গত ৩১ মে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। ভিসা পাওয়াসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও হাজার হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে না পারায় দুই দেশের সরকারের ওপর দায় চাপিয়েছেন বায়রার নেতারা।
২০২২ সালের জুনে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের ৪ এমপির প্রতিষ্ঠানসহ ২৫ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয়। এগুলো সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়। এরপর তাদের সঙ্গে যোগ হয় আরও ৭৫টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি। তবে অন্য ব্যবসায়ীদের আনা চাহিদাপত্রও মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের অনলাইন ব্যবস্থা এফডব্লিওসিএমএস-এর অটো অ্যালোকেশনে সিন্ডিকেটে থাকা এজেন্সির নামে আসে। অভিযোগ রয়েছে, এমপিদের প্রতিষ্ঠানসহ সিন্ডিকেটের এজেন্সিগুলো কর্মী প্রতি দেড় লাখ টাকা করে নিয়েছে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগের সরাসরি জবাব দেননি বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নিয়েছে এজেন্সি।
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে ফেনীর এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ১০১ এজেন্সির মধ্যে সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিও রয়েছে। যেখানে সরকার আছে সেখানে সিন্ডিকেট নেই। মালয়েশিয়া সরকার যাদের বাছাই করেছে, তারাই কর্মী পাঠিয়েছে। এতে এমপিদের কী দোষ জানতে চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন হাজারী।
সিন্ডিকেটে ঢুকে ব্যবসা করা এমপিদের প্রসঙ্গে সংবাদ এবং কার্টুন প্রকাশে তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা তো মালয়েশিয়ায় যাই নাই, কাউকে বলি নাই, আমাদের লাইসেন্স দেন। নিয়ম মেনেই সব হয়েছে।
এদিকে সরকার নির্ধারিত ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা হলেও কর্মীদের কাছ থেকে সাড়ে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন ১০১ এজেন্সির বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এসব এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাওয়ার কারণে সাপ্লাই চেইন নষ্ট নয়।
মালয়েশিয়ায় কর্মী যেতে না পারায় দুই দেশের সরকারকে দায়ী করে রুহুল আমিন স্বপন বলেন, গত ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকার ই-ভিসা ইস্যু করেছে। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দিয়েছে। ৩০ বা ৩১ মে যদি ই-ভিসা ইস্যু হয় তাহলে কীভাবে তালিকা করব। যদি মার্চে বাজার বন্ধের ঘোষণর পরই ই-ভিসা ইস্যু ও নিয়োগানুমতি বন্ধ করা হতো, তাহলে এই সংকট তৈরি হতো না।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ছাড়পত্র পাওয়া ৪ লাখ ৯৪ হাজার কর্মীর মধ্যে ৪ লাখ ৭৭ হাজার মালয়েশিয়া যেতে পেরেছে। তবে রহুল আমিন স্বপন বলেন, না যেতে পারা ১৭ হাজার কর্মী নতুন নয়। গত ২২ মাসে তারা জমেছে। বিমানের টিকিট না পাওয়ায় ৫-৬ হাজার কর্মী যেতে পারেনি।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের আহ্বান জানিয়েছে। তদন্ত কমিটির চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে বায়রার মহাসচিব বলেছেন, তদন্তে সহযোগিতা করবে বায়রা। সরকার ৫৩টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। মালয়েশিয়া সরকার ৪৭ নিয়োগকারীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীর চাহিদার বিপরীতে বিএমইটি ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু নিয়োগ অনুমতি পাওয়ায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো আগে টাকা নিয়েছে।
সিন্ডিকেট তৈরির দায় দুই দেশের সরকারকে দিয়ে বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ১০১ এজেন্সি ব্যবসা করেছে, তাদের সুযোগ দিয়েছে কে? দুই দেশের মন্ত্রণালয়। কথা দিলাম, যে লোকগুলো যেতে পারেনি, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির দিয়ে তাদের ডাকা হবে। তাদের তালিকা করা হবে। কোন এজেন্সিকে কত টাকা দিয়েছে তাও লিপিবদ্ধ থাকবে। যদি সরকার তাদের পাঠাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায়ে বায়রা পদক্ষেপ নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ চৌধুরীসহ বায়রা নেতারা।
- বিষয় :
- শ্রমবাজার
- মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার