ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাহারের দাবি

ঢাবিতে দাপ্তরিক সেবা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, লাইব্রেরি ভাঙচুর

ঢাবিতে দাপ্তরিক সেবা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, লাইব্রেরি ভাঙচুর

ছবি: সমকাল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪ | ১৬:৫৮ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ | ১৮:০৪

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের বাতিলের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে কার্যত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অচল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, বন্ধ রয়েছে প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক কার্যক্রমও। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে জরুরি চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সরেজমিনে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এ দিকে লাইব্রেরি বন্ধ করায় প্রধান প্রবেশপথ ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকাল থেকে সারাদেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে। কর্মবিরতির সমর্থনে কলাভবনের মূল ফটকের অভ্যন্তরে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেন।

এর আগে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া। তাদের দাবিগুলো হলো, ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।

সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন তবে গেট বন্ধ রয়েছে। সকাল ৯টার দিকে গেট খোলা হবে এমনটি কর্মচারীরা জানালে শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করেন তবে আর খোলা হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা প্রবেশপথে সামনে থাকা কিছু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং গেটে ধাক্কাধাক্কি করেন। এতে প্রবেশপথের বেশকিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন তবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা তারা কীভাবে বন্ধ করে দেয়? ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে তাই বলে লাইব্রেরি কেন বন্ধ হবে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এমনিতেই নেই। এর ফলে আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।’

জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, ‘এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্যই। ভবিষ্যতে তারাই শিক্ষক হবে। সর্বাত্মক সকল প্রকার প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কাজ বন্ধের অংশ হিসেবে বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনে সর্বাত্মকতা বন্ধ রাখার জন্য এটা করা হয়েছে। ছাত্রদের জন্যই এ আন্দোলন, আগামীতে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের জন্য আমাদের কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা বারবার বলেছি, কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে বাধ্য করবেন না। আমাকে প্রশ্ন না করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করুন কেন ছাত্ররা লাইব্রেরি ঢুকতে পারছে না, শিক্ষকদের লাইব্রেরি না খোলার মত অবস্থায় যেতে হলো।’

মেডিকেল সেন্টারে সেবা বিঘ্ন

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের হোমিওপ্যাথি বিভাগে সেবা না পেয়ে ফেরত আসার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে চক্ষু-দন্ত বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগ চালু রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খোকা বলেন, ‘রোববারে গিয়ে ডাক্তার পাইনি। আজকে সকালে আবার গিয়েছি, তবে ডাক্তার বললেন কর্মবিরতিতে সেবা দেবেন না। এটা খারাপ লাগার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মেডিকেল সেবা বন্ধ ছিল না। কোনো বর্বর জাতিও এভাবে হাসপাতাল সেবা বন্ধ করবে না।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোমিওপ্যাথি বিভাগ থেকে সেবা না নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন বিজয় একাত্তর হলের প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ সুজাব আলী। জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, রোববারে গিয়ে কোনো চিকিৎসককে পাননি। আজকে এসেও ডাক্তার সেবা প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কর্মবিরতির কারণে।

জানতে চাইলে সহকারী মেডিকেল অফিসার হালিমা সাদিয়া বলেন, কর্মবিরতির কারণে সেবা দিচ্ছেন না তারা। যেদিন কর্মবিরতি শেষ হবে তখন সেবা পাওয়া যাবে।

মহিলা ও শিশু বিভাগের আয়া মিনোরা বেগম বলেন, আমাদেরকেও কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলনে যেতে বলা হয়েছে। তবে জরুরি সেবার জন্য দুইজন রয়েছে। সাধারণত তিন-চারজন থাকে। বাকিরা আন্দোলনে।

সার্টিফিকেট-ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে এসে বিপদে শিক্ষার্থীরা

আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সকল কার্যক্রম। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। দূরদূরান্ত থেকে এসেও অনেকে সেবা পাননি। ‘কর্মবিরতি’ পোস্টার লাগিয়ে কিছু কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে আবার কিছু কক্ষে লোকজন থাকলেও তারা কোনো সেবা দিচ্ছেন না।

সিরাজগঞ্জ থেকে সার্টিফিকেট তুলতে এসেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আসলাম হোসেন। তবে সকাল সাড়ে সাতটায় এসেও কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। সমকালকে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছিলাম রোববার। পুরো দিন থেকেও সার্টিফিকেট তুলতে পারিনি। আজকে সকাল থেকে বসে আছি, এখনও তারা সেবা দিচ্ছে না। আমার ৪ তারিখে চাকরির ভাইভা রয়েছে। এটা না পেলে ঝামেলায় পড়ে যাব। তাই বসে আছি দেখি দেয় কিনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল মোতালেব সমকালকে বলেন, আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে তবে জরুরি সকল সেবা চালু রয়েছে। শুধুমাত্র দাপ্তরিক ক্ষেত্রে কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীর অতীব জরুরি হলে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ যাবতীয় সেবা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি চালু রাখার জন্য লিখিত আবেদন করেছে। এ বিষয়ে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আর মেডিকেল-নিরাপত্তাসহ জরুরি সকল সেবা চালু থাকবে।

আরও পড়ুন

×