ঢাবি
জরুরি সনদ-নম্বরপত্র তুলতে না পারা শিক্ষার্থীরা বিপাকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতি। ছবি: সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ০৭:৪২ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ০৭:৪৩
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত কর্মবিরতি পালন করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। সেশনজট অনিশ্চয়তাসহ জরুরি নম্বরপত্র, সনদ পত্র তুলতে না পেরে বেশি বিপাকে পড়েছেন সদ্য গ্রাজুয়েট সম্পন্নকারী চাকরিপ্রত্যাশী অথবা বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে।
গত সাড়ে তিনমাস থেকে প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পেরে গত রোববার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া। শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতিতে আছেন। এরপর থেকে সারাদেশে ৩৫ টিরও অধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতিতে অচলাবস্থা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সনদ ও মার্কসীট উত্তোলনের আবেদন করে তিন দিন ধরে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে ঘুরছি। অফিস কক্ষে গেলে বলে কোনো কাজ হবে না, কিছু বলার থাকলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের রুমে যান। নিয়ন্ত্রক অফিসে কেউ কথা বলতে নারাজ। একজন বলেন প্রো-ভিসির (শিক্ষা) সঙ্গে কথা বলেন। জরুরি বার বার উল্লেখ করার পরও কেউ বিষয়টি কানে তুলছেন না।
মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফলাফল সমন্বয় না হওয়ায় স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারছেন না সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদা সুলতানা অণু। তিনি বলেন, এ বছর প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তবে তার তৃতীয় বর্ষের দুটি বিষয়ে মান উন্নয়ন থাকায় এবার সে পরীক্ষাগুলো পুনরায় দিয়েছিলেন। এগুলোতে উত্তীর্ণ না হলেও ফলাফল সমন্বয় না হওয়ার কারণে তিনি স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারছেন না।
এ শিক্ষার্থী জানান, তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশের মাসখানেক সময় কেটে গেলেও এখনও সমন্বয় হয়নি। এদিকে তার সহপাঠীরা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে ক্লাসও শুরু করে দিয়েছেন। স্নাতক পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কায় দিন কাটছে তার।
এ দিকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি দিয়ে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদও সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেছে। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারও খোলা হয়নি।
অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা পেনশন কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি এবং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ও অর্থমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আলোচনায় বসুন। অর্থমন্ত্রী কেন আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন? আর যারা এই স্কিম করেছেন, তারা নিজেরা এর আওতায় আসুন এবং দেখুন। আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে।’
অধ্যাপক জিনাত হুদা অবস্থান আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা ৩ দফা দাবি জানিয়েছি। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করতে হবে। দাবিগুলো যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।
এ দিকে বুধবার সন্ধ্যায় নিজামুল হক ভূইয়া সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত আলোচনার স্থান ও সময় নির্ধারণ হয়নি। তবে আমরা কালকে (বৃহস্পতিবার) সকালে আলোচনায় বসার ব্যাপারে আশাবাদী। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গেও আলোচনায় বসার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
কর্মবিরতিতে অনড় অবস্থান, চলবে আজও
সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও পরিপূর্ণ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি থেকে না সরার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও সকল প্রকার দাপ্তরিক কার্যক্রম, ক্লাস-পরীক্ষাসহ লাইব্রেরি বন্ধ থাকবে।
অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, আমরা আলোচনায় বসব। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে, শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে একমত হলে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যাব। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণে স্পেশাল ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ দিকে বুধবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মকে কূপমণ্ডূকতা নামেও আখ্যা দেন তারা।
কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক এবং ঢাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মোতালেব বলেন, বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা। যে অধিকার জাতির জনক দিয়ে গেছেন, সেই অধিকার হনন করার অধিকার কারো নেই। আমরা বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিম চাই না। এ সময় দাবি না মানা পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।