নাটকের স্বার্থে অশোক নন্দী ছুটে যেতেন সর্বত্র: জাহাঙ্গীর কবির নানক 

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, প্রকাশনা শিল্প, নাটক ও নাট্যকলার উন্নয়নে অশোক রায় নন্দী ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ ও সামনের সারির যোদ্ধা। তিনি বিশ্বাস করতেন, নাটক কেবল চিত্তবিনোদনের জন্যই নয়, নাটক সমাজ পরিবর্তনের এক সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ারও বটে। একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে নাটকের স্বার্থে ছুটে যেতেন সর্বত্রই। এমনকি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছেও ছুটে গেছেন বেশ কয়েকবার, কেবল নাটক আর নাটকের মানুষগুলোর কথা বলতে। কি করে শিল্পকলার অন্যতম শাখা এ নাটককে আরও সমৃদ্ধ ও গণমুখী করা যায় তাই ভাবতেন।

রোববার বাংলাবাজার কে. এল জুবিলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সদস্য, নবযুগ প্রকাশনী ও রিডার্স ওয়েজের কর্ণধার, ছায়ানটের সদস্য, প্রকাশক, থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাট্যজন অশোক রায় নন্দীর প্রয়াণ উপলক্ষে স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এ স্মরণসভার আয়োজন করে।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মানুষের উপকার করে বেড়াতেন অশোক রায় নন্দী। ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ, আপাদমস্তক অহংকারমুক্ত সৎ ও নিভৃতচারী মানুষ। নিজের প্রচার বা প্রকাশ কোনোটিই চাইতেন না। সদালাপী বন্ধুবৎসল একজন মানুষ; পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছিলেন ৩ পুরুষের সৃজনশীল ব্যবসা-প্রকাশনা শিল্পকে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণ করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর এমপি। তিনি বলেন, অশোক রায় নন্দী একেবারেই নিভৃতচারী ও কাজ পাগল আত্মভোলা মানুষ। নিরলস পরিশ্রমী এই মানুষটির অকস্মাৎ চলে যাওয়ায় এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে এ অঙ্গনের। নির্লিপ্তভাবে কাজ করে গেছেন। লোভহীন একজন মানুষ এই অশোক রায় নন্দী। চলনে, বলনে, চিন্তায়, মননে অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় গড়ে তুলেছেন নিজেকে। যার প্রতিটি কর্মেই ছিল এর সুস্পষ্ট ছাপ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নির্ভীক সেনানী ছিলেন অশোক রায় নন্দী। প্রকাশনার ক্ষেত্রেও এই ভাবাদর্শ জ্যোতি ছড়িয়েছে প্রতিটি কর্মে। একটি পুস্তক প্রকাশনার ক্ষেত্রে বারবার পড়েছেন পাণ্ডুলিপি, এরপর চুলচেরাভাবে দেখেছেন প্রুফ। নির্ভুল বানানের জন্য ছিল তার উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। তিনি ছিলেন একজন সৃজনশীল প্রকাশক, যার বড় কৃতত্ব হলো নিজস্ব প্রকাশনায় ৫০০ এর উপরে বই প্রকাশ করেছেন অশোক রায় নন্দী।

অশোক রায় নন্দীর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন প্রয়াতের ছোট ভাই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। 

ভারতের বিশিষ্ট অভিনেতা ও নাট্যজন শ্রী বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, প্রজ্ঞা, মেধা, মনন ও দক্ষতায় নিরলস সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অশোক রায় নন্দী আজীবন স্বরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর কর্মেই তিনি বেঁচে থাকবেন। আমাদের দুই বাংলাতেই নাট্যজগতে তাঁর অবদান নাট্যপ্রেমীরা আজীবন মনে রাখবে। তিনি একজন উদার মনের মানুষ ছিলেন।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, তারিক সুজাত সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ, শ্রী আশিস গোস্বামী বিশিষ্ট নাট্যকার ও নাট্য গবেষক (ভারত), বিশিষ্ট অভিনেতা কাজী রাকায়েত, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক তপন বাগচী, পুস্তক প্রকাশক সমিতির সহসভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন।এছাড়া বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।