প্যান্ডেলের নিচে বিআরটিএ-সেতু বিভাগের অফিস

বিআরটিএ ভবনের প্রাঙ্গণে শামিয়ানা টাঙিয়ে অফিস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪ | ২০:২৭ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ | ২০:৩৫
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে দুর্বৃত্তের আগুনে পোড়া সেতু বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভবনের প্রাঙ্গণে শামিয়ানা টাঙিয়ে অফিস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মনজুর হোসেন অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে পোড়া গাড়ির পাশে চেয়ার পেতে ল্যাপটপ খুলে বুধবার অফিস করেন। একইভাবে অফিস করেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল। কর্মচারীরা অফিস প্রাঙ্গণে হাজিরা খাতা সই করেন।
কারফিউ শিথিল হওয়ায় বুধবার থেকে খুলছে সরকারি অফিস। রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবন এবং পাশের বিআরটিএ সদর কার্যালয় নাশকতার আগুনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, সেখানে কার্যক্রম চালুর পরিবেশ নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষ আসবাব কম্পিউটার কিছুই অক্ষত নেই। বন্ধ হয়ে গেছে লিফট।
তাই প্রাঙ্গণে শামিয়ানা টাঙিয়ে অফিস খোলা হয়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, কিছুই অক্ষত নেই। অন্তত ৫৫টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। সেতু ভবনের বেইসমেন্ট থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত সব পুড়ে গেছে। ভবনটি ব্যবহার যোগ্য করা সম্ভব হবে কী না, তা যাচাইয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির মতামত পেলে মেরামত করা হবে। তারপর সেতু ভবন সচল হবে। এর আগ পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থাতে চলবে অফিস।
তবে ভবন সচল হতে কতদিন সময় লাগবে, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি মনজুর হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, সেতু ভবন আগুনে পোড়ানো হলেও পদ্মা সেতু, যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু, মুক্তপুর সেতু এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেল সচল রয়েছে। টোল আদায় কার্যক্রমও স্বাভাবিক রয়েছে। যদিও টোলের রিয়েল টাইম ডাটা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সেতুগুলোর বিস্তারিত নকশাসহ অন্যান্য তথ্যের ব্যাকআপ রয়েছে।
সেতু বিভাগের অপর স্থাপনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বৃহস্পতিবারও বন্ধ ছিল। মনজুর হোসেন সমকালকে বলেছেন, এক্সপ্রেসওয়ের বনানী এবং মহাখালী টোল প্লাজা পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মনে হচ্ছে না, কারফিউ থাকলে এক্সপ্রেসওয়ে চালু করা সম্ভব হবে।
কারা আগুন দিয়েছে সেতু ভবনে- প্রশ্নে সচিব বলেছেন, এসব শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। যারা এসেছিল তারা লুটেরা। আগুন দিয়ে কম্পিউটার, গাড়ির যন্ত্রাংশসহ সব কিছু লুটপাট করেছে। যা শিক্ষার্থীদের আচরণের সঙ্গে মেলে না।
সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হামলা-অগ্নিসংযোগে ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রথমতলা থেকে তৃতীয়তলা পুরো পুড়ে গেছে। চতুর্থ ও পঞ্চমতলা পুড়ে গেলেও নথিপত্র রক্ষা করা গেছে। পুরো ১৪তলা ভবনই ছাইয়ের স্তূপে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখা যায়, সেতু ভবনের পাশের বিআরটিএ কার্যালয়ের নীচতলার একই অবস্থা হয়েছে। মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে আসবাব, ফলস সিলিংয়ের পোড়া অংশ। নীচতলার লিফটের সুইচ, ডিজিটাল হাজিরা ডিসপ্লে ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
বিআরটিএর পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে শামিয়ানার নীচে বসে অফিস করেন গৌতম পাল। তিনি সমকালকে বলেন, আপাতত অফিস খোলা হলেও, ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও কর সনদ হালনাগাদ, মালিকানা পরিবর্তনসহ সব সেবা সারাদেশে বন্ধ রয়েছে। দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে না।
সার্ভারে চালক এবং গাড়ির তথ্য অক্ষত রয়েছে কিনা- প্রশ্নে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেছেন, পাঁচতলায় সার্ভার কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে যাচাইয়ের পর বলা যাবে, তথ্য ভাণ্ডার ঠিক আছে কী না। সার্ভার ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। ভবনের অবস্থা যাচাইয়ের পর, সেখানে অফিস চালুর সিদ্ধান্ত হবে।
- বিষয় :
- সেতু বিভাগ
- আগুন
- বিআরটিএ
- কোটা সংস্কার আন্দোলন