ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

এক মাস পর খুলল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

এক মাস পর খুলল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ফাইল ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ০১:০৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক মাস পর আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট দেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। গতকাল স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মোটামুটি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিদ্যালয়গুলোয় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আইডি কার্ড ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে যেন প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, রোববার বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলেও কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে উপাচার্যসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পদত্যাগ করায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। 

আন্দোলনের কারণে গত ১৬ জুলাই বন্ধ ঘোষণা করা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। একই দিন রাতে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। 

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজে সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘ এক মাস পর শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে ফিরে 
বেশ উচ্ছ্বসিত। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও সময়ের সঙ্গে তা বাড়বে বলে আশা করছে প্রশাসন। এ ছাড়া স্কুলের গেটে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শিক্ষার্থী পরিবহনে যানবাহনগুলোকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। অভিভাবকদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর জন্য এসএমএস দেওয়া হয়েছে। 

জানতে চাইলে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এমাম হোসাইন বলেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বৈধ অভিভাবক ছাড়া কাউকে স্কুলে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা মানতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর নজরদারি করা হবে। 
ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তারা যেন রাস্তায় কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্তদের সতর্ক থাকতে বলেছি। 

উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় স্থবির বিশ্ববিদ্যালয় 
রোববার খুললেও ক্লাস হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অবস্থা বিরাজ করছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে শূন্যতা। বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও প্রশাসনিক শূন্যতার কারণে কোনো বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। কবে নাগাদ ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে সে বিষয়ও নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। আবাসিক হলগুলোতেও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে সিট বণ্টন করে ওঠার চেষ্টা করছেন। 
ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমাদের কর্ণধারের (উপাচার্য) সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। যিনি উপাচার্য হিসেবে আসবেন, তাঁর আসার প্রেক্ষাপটেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জবি প্রতিনিধি জানান, আড়াই মাস পর গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও কোনো বিভাগেই ক্লাস শুরুর খবর পাওয়া যায়নি। প্রথম দিনই মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আরিফ ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মিল্টন বিশ্বাসকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
চবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষকদের আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে প্রায় দুই মাস  ধরে স্থবির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ক্লাস-পরীক্ষা। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রশাসনিক ব্যক্তি পদত্যাগ করায় অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছেন না অনেক শিক্ষার্থী।
রাবি প্রতিনিধি  জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৭৫ জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ৫৯ বিভাগের মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র তিনটি বিভাগে পাঠদান শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) আগামী ২৪ আগস্ট থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সব বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। 

শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শক পদত্যাগ করায় কার্যত স্থবির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ না করায় তাঁকে কয়েক দফায় আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। হলগুলোয় শিক্ষার্থীরা ফিরতে শুরু করেছেন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আবাসিক হল খুলবে আগামী ২১ আগস্ট বিকেলে। আর ক্লাস শুরু হবে ২৫ আগস্ট। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরপ্রধান পদত্যাগ করেছেন। এতে প্রশাসনশূন্য ক্যাম্পাসে চালু হয়নি ক্লাস-পরীক্ষা।
জাবি প্রতিনিধি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি দলীয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে মিছিল শেষে বটতলায় গিয়ে সমাবেশ করা হয়। এ ছাড়া দুপুরে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। 

আরও পড়ুন

×