ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

গণআন্দোলনে হতাহতের জন্য ফাউন্ডেশন

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ

গণআন্দোলনে হতাহতের জন্য  ফাউন্ডেশন

ফাইল ছবি

 বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪ | ০১:২৫

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হতাহতদের পরিবারের সেবায় একটি ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ ফাউন্ডেশনের কাজ হবে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিপ্লবের স্মৃতি ধরে রাখা, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 
এদিকে সরকারের নির্বাহী আদেশে তেল, গ্যাস ও জ্বালানি-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিধান বাতিল করা হচ্ছে। গণশুনানি ছাড়া আর বাড়বে না বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম। এ জন্য ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নয়; সরকারকে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ ও সমন্বয়ের ক্ষমতা দিয়ে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। পরে সংসদ বসলে অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত হয়। মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হয় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের দাম। এটি নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গ্যাস সম্পদ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের ট্যারিফ বা মূল্য নির্ধারণে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের অধিক সম্পৃক্ততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন, জনপ্রত্যাশা এবং ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ৩৪(ক) ধারা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন এবং তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বিশদ আলোচনা করা হয়। একাধিক উপদেষ্টা এ ইস্যুতে বক্তব্য দেন। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্যা ব্যবস্থাপনা ও বন্যার্তদের সহায়তাকল্পে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করবে। সরকারের উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্তদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি তদারক করবেন। এ ছাড়া বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা বন্যাদুর্গতদের দুর্দশা প্রশমনে সহায়তা করতে সব বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন।

গণআন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সেবায় ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে  রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ফাউন্ডেশনের প্রধান হবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা ফাউন্ডেশনের সদস্য হবেন। ফাউন্ডেশনের কাজ হবে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিপ্লবের স্মৃতি ধরে রাখা, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানতে পারে আন্দোলনের সময় কী ঘটেছিল। ফাউন্ডেশনটি হবে একটি আইনি সত্তা।
তিনি বলেন, আমরা নীতিগতভাবে বলপূর্বক গুমের বিষয়ে একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি এসব ঘটনার তদন্ত করবে।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে বাদ শেখ হাসিনার নাম
‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী নতুন নাম হবে ‘বাংলাদেশ জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’। 
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানটির নামের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম বিলুপ্ত করা হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় পুঁজি, বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সরকারি খরচে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণে আইনি কাঠামো করবে সরকার। এ জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।


 

আরও পড়ুন

×