পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নির্দেশনা
কক্সবাজারের সেই সংরক্ষিত বনে বাফুফের ফুটবল একাডেমি হবে না

কক্সবাজারের জঙ্গল খুনিয়াপালং সংরক্ষিত বন। ছবি: সংগৃহতি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:১৭
কক্সবাজারের জঙ্গল খুনিয়াপালং সংরক্ষিত বনে ফুটবল প্রশিক্ষণ একাডেমি করতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) ২০ একর জায়গা ডি-রিজার্ভ (সংরক্ষিত বনের আওতামুক্ত) করে বরাদ্দ দিয়েছিল। ২০২২ সালের ৪ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বন বিভাগ বাফুফেকে বনাঞ্চলের অংশটি বুঝিয়ে দেয়। পরিবেশবাদীরা দীর্ঘ দিন ধরে বন কেটে এ ধরনের স্থাপনা তৈরির বিরোধিতা করে এলেও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে বনের জায়গা রক্ষা পেল। সংরক্ষিত বনে ফুটবল প্রশিক্ষণ একাডেমি করার উদ্যোগ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফুটবল একাডেমি নির্মাণের জন্য বিকল্প জায়গাও দেওয়া হয়েছে।
রোববার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বাফুফেকে দেওয়া এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ওই ২০ একর জায়গা বরাদ্দের আদেশ বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে গত ২৮ আগস্ট পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টা এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা কাছে একটি চিঠি দেয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এই নির্দেশনা এলো।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলামের সই করা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বাফুফেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণের জন্য কক্সবাজারে যে ২০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে অংশীজনরা অবহিত করেছেন। ওই স্থানের পরিবর্তে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের ধলিরছড়ায় পরিত্যক্ত ১৯ দশমিক ১ একর জায়গায় সেন্টার স্থাপনের জন্য অংশীজনরা প্রস্তাব করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিকল্প স্থানে সেন্টার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। পদক্ষেপ সম্পর্কে জরুরিভিত্তিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করার জন্যও অনুরোধ করা হলো।
যে বন ফুটবল একাডেমি বানাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তা আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণের জোট আইইউসিএনর তালিকাভুক্ত মহাবিপদাপন্ন এশিয়ান হাতির আবাসভূমি। একাডেমি স্থাপনে করলে বনের প্রায় ৩০ হাজার ছোট বড় গাছ কাটা পড়ার আশঙ্কা ছিল। এছাড়া এ বনে হরিণ, বন্যশুকর, বানরসহ অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও পাখি আছে। পরিবেশবিদরা তখন বন বাঁচাতে আন্দোলনের পাশাপাশি বিকল্প চারটি জায়গা চিহ্নিত করে দিলেও কোনো কাজ হয়নি। উল্টো সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেছিলেন, বনের জায়গা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না বলে বনের জায়গা দেওয়া হয়েছে। যদি বিকল্প থাকতো তারা দিতেন না।
এমন সময়ে বনভূমি দেওয়া হয়েছিল যখন কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণে ৭ হাজার একর বনভূমি বেহাত হয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে প্রায় ৫০ হাজার একরের মতো বনভূমি। কক্সবাজারের বন বিভাগের ২ ডিভিশন মিলে বনভূমি রয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫৭ একর। সমতলে এ একাডেমি নির্মাণ করার জন্য যথেষ্ট ভূমি থাকলেও বাফুফে এ বনকেই নির্বাচন করে।
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে বলেন, এটা ছিল রিজার্ভ ফরেস্ট। রিজার্ভ ফরেস্ট সরকার প্রধান ডি-রিজার্ভ করতে পারেন। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে ডি-রিজার্ভ করার যে আদেশটি হয়েছিল তা বাতিল করার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করেছিলাম। পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিলাম বিকল্প জায়গা বেছে নেওয়ার। সে মোতাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বিকল্প জায়গা বেছে নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বনকে বনের মতো থাকতে দিতে হবে। বনের জমিতে স্থাপনা বানানোর যে প্রবণতা আছে তা থেকে সরে আসতে হবে। যেকোনো স্থাপনা বানাতে পরিবেশগত প্রভাব যাচাই করতে হবে। কারণ দেশে দিন দিন বনের পরিমাণ কমছে। বন ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি আছে। ফলে বনের জমিতে যেন ফুটবল একাডেমি না হয়, সেই অনুরোধ করেছিলাম।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সংরক্ষিত বনে ফুটবল প্রশিক্ষণ একাডেমি করার উদ্যোগ বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। খবর নিয়ে জেনেছি, যে ২০ একর জমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি হওয়ার কথা সেটি সংরক্ষিত বন। এটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। বিকল্প জায়গা থাকলেও বাফুফে পরিবেশগত দিকে দৃষ্টিপাত না করে এই জায়গা পছন্দ করেছিল। এখন বন নয়, বিকল্প জায়গাতেই একাডেমি হবে। বনাঞ্চল, জীব বৈচিত্র্যসহ সার্বিক পরিবেশ বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা হবে।
প্রসঙ্গত, সংরক্ষিত বন ও পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় বাফুফেকে জমি বরাদ্দ বাতিলের দাবিতে ২০২২ সালের ২০ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) বিভিন্ন সংগঠন। এরপর একই বছরের ২৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফার হস্তক্ষেপ চেয়ে বিশিষ্টজনরা ফিফার শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।