আকুপাংচার চিকিৎসায় সুফল পাচ্ছে বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিসের রোগীরা: ডা. এস এম শহীদুল ইসলাম

ডা. এস এম শহীদুল ইসলাম
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৫:২২ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৫:৩৫
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আকুপাংচারের মাধ্যমে যে ১০১ টি রোগের চিকিৎসার সুপারিশ করেছে তারমধ্যে অন্যতম হলো বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিসের চিকিৎসা। এছাড়া হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) আকুপাংচার এর প্রমাণ ভিত্তিক সুপারিশ করে। আকুপাংচার সারাবিশ্বে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্যতা পেলেও আমাদের দেশে অনেকের কাছে আকুপাংচার নতুন শব্দ বা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে পরিগণিত হয়। তাই আকুপাংচার নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন শশী হাসপাতালের পাইওনিয়ার আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ও চিফ কনসালটেন্ট ডা. এস এম শহীদুল ইসলাম।
বাত-ব্যথা
বাত-ব্যথা বহুল প্রচলিত শব্দ হলেও বাত হলো প্রোগ্রেসিভ রোগ, শরীরে প্রবহমান থাকে আর ব্যথা রোগের উপসর্গ মাত্র। শরীরে নানা কারণে ব্যথা অনুভব হতে পারে। প্রথমে বাত মানব শরীরের গিরাগুলোকে আক্রমণ করে নষ্ট করে ফেলে, ফলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে গিরা বাঁকা হওয়া বা গিরাগুলো নড়াচড়া করতে না পারায় রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। বাত রোগ শুধু গিরার ক্ষতি করে না অন্য অঙ্গগুলোকেও আক্রান্ত করে। এতে নানা ধরনের রোগ তৈরি হয়।
মানুষের শরীরের বিভিন্ন হাড়, জয়েন্টে ব্যথা বা বিভিন্ন অংশ তথা মাথা, হাত, ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কনুই, কবজি, রগ মাংসপেশি ইত্যাদিতে ব্যথা পরিলক্ষিত হয়। দেশের প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ ব্যথা রোগে ভুগেন বলে অনেকেই ব্যথা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন। এর একটা উদাহরণ হলো অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে এসে শুরুতেই বলে থাকেন, আমি পিএলআইডির রোগী। আমার মেরুদণ্ডে ব্যথা। অর্থাৎ নানা কারণে মানুষ ব্যথায় ভুগেন এবং যথাযথ চিকিৎসা না হলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে এটাই বাস্তবতা।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিস
মস্তিষ্কের রক্তনালির মধ্যে রক্ত চলাচল ব্যাহত বা ব্যাঘাত ঘটায় স্ট্রোক হলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিস হয়। এতে আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না, শরীরের যেকোনো একদিক বা হাত পা অবশ হয়ে যায়। অনেক সময় খাবার খাওয়া, কথা বলাতেও অসুবিধা হয়।
আকুপাংচার
ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম হলো একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা যা প্রাচীন চীনা দর্শন ও সংস্কৃতির মূল্যবোধ নিয়ে তৈরি হয়েছে। আকুপাংচার ট্র্যাডিশন চাইনিজ মেডিসিন এর অপরিহার্য উপাদান হিসেবে অনেক রোগ এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফলে আকুপাংচার স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃত ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর অবদান অনস্বীকার্য। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আকুপাংচার চিকিৎসার উৎপত্তির ইতিহাসের পৃষ্ঠায় চীনের নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর বয়স পুরোনো চীনা এই চিকিৎসা পদ্ধতির। সময়ের পরিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে আকুপাংচার চিকিৎসারও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ফলে সেবা গ্রহীতাদের কাছে তা দিনদিন গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।
আকুপাংচার সম্পর্কে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, মানব শরীরের নির্ধারিত আকু পয়েন্টগুলোতে রোগের প্রকারভেদ অনুযায়ী অভিজ্ঞ আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ আকুপাংচার সুচ প্রবেশ করিয়ে এর যথাযথ প্রয়োগ ঘটান এবং এর সঙ্গে বিভিন্ন আকুপাংচার সমন্বিত থেরাপি যোগ করে আকুপাংচার চিকিৎসা দেয়া হয়। লক্ষণীয় যে আধুনিক আকুপাংচারের ক্ষেত্রে আকুপয়েন্টে সূক্ষ্ম সুচ প্রবেশ করিয়ে কিউই শক্তির প্রবাহ পরিবর্তন করা হয়। আকুপাংচার এর সাধারণ তত্ত্বটি এই ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত যে, মানবশরীর জুড়ে শক্তি প্রবাহের বা কিউই নির্দেশন রয়েছে যা সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই প্রবাহের ব্যাঘাত ঘটলে প্রভৃতি রোগ তৈরি হয়। আকুপাংচার চিকিৎসা কিউই বা উজ্জীবনী শক্তিতে পুনরায় ফিরিয়ে এনে রোগীকে সুস্থ করে তোলে।
আকুপাংচার চিকিৎসার প্রয়োগ
স্বাভাবিকভাবে প্রথমেই রোগ শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তথ্য-উপাত্ত, কেস স্টাডির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। প্রতীয়মান হয় যে, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাতের ধরণ চিহ্নিত করে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু আকুপাংচারে কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। জানা যায়, বাতের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেছেন পাশাপাশি ডিজিজ মডিফাইং অ্যান্টি রিউমেটিক ড্রাগ নিয়েছেন বা অনেকেই স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেছেন। আবার অনেকে এসব ওষুধে ভালো ফলাফল না পেয়ে বাতের আধুনিক ওষুধ বায়োলজিকালি মেডিসিন গ্রহণ করেও সুস্থ হননি। এর কারণ হলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কখনো কখনো আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই ওষুধ নির্ভরতার বাইরে বাতের চিকিৎসায় আকুপাংচার খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। বাতের চিকিৎসা প্রটোকলে আকুপাংচার, বাত রোগের ধরণ বা প্রকারভেদ অনুযায়ী আকুপাংচার চায়নিজ থেরাপির পাশাপাশি লাইফস্টাইল মডিফিকেশনকে সংযুক্ত করা হয়। এতে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজেদের সুখকর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিয়ে যে আলোচনা করেছি সেসব ব্যথার উৎপত্তি ও প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে আকুপাংচার চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সাধারণত বাতের মতোই ওষুধ ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের ব্যথার রোগীকে আকুপাংচার চিকিৎসা দেয়া হয়। আকুপাংচার, চায়নিজ মেডিসিন থেরাপিসহ ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সংযুক্ত থাকে। সাধারণ মনে প্রশ্ন থাকে আকুপাংচার কোথায় করা হয়, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কারো কোমরে ব্যথা হলে কোমরে, হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটুতে। লক্ষণীয় যে আকুপাংচার চিকিৎসা গ্রহণ করে মানুষ বিভিন্ন ধরনের ব্যথা বা দীর্ঘদিনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাচ্ছে যা আকুপাংচার চিকিৎসার সফলতার প্রমাণ বহন করে।
প্যারালাইসিস এর ক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঔষধ ঝুঁকিমুক্ত করলেও শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারে না। প্যারালাইসিস পরবর্তী সমস্যাগুলো দূর করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য আকুপাংচার ও চাইনিজ ফিজিওথেরাপি কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
আকুপাংচার সেশন
আকুপাংচার চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সেশন ভাগ করা। প্রাথমিক অবস্থায় পনেরোটি বা তিরিশটি সেশন বা প্রয়োজন সাপেক্ষে হ্রাস- বৃদ্ধি করা হয়।