ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বন্যায় পোলট্রি খামারে বিপর্যয়

উৎপাদন কমায় খুচরা বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ে

উৎপাদন কমায় খুচরা বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ে

ছবি-সংগৃহীত

মাইনুদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২:০৩ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২:১১

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় হাজার হাজার মুরগির খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অগণিত খামারের হাঁস-মুরগি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুরগির মাংস ও ডিমের বাজারে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় কমে গেছে সরবরাহও।

প্রাথমিক ভাবে সরকারি হিসেবে এবারের বন্যায় পোলট্রি খাতে ৪০০ কোটি টাকা লোকসান অনুমান করা হয়েছে। তবে পোলট্রি শিল্প সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, সঠিক হিসাব শেষে কেবল কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সিলেট অঞ্চলেই ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারী হিসাব অনুযায়ী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার অন্তত ৮০ শতাংশ মুরগির খামার প্লাবিত হয়েছে। এ বন্যায় চট্টগ্রামের পোলট্রি খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বন্যার পানিতে দুই সপ্তাহ ধরে খামার প্লাবিত হয়ে প্রতিটি খামারের মুরগি মরে গেছে। ডিম ভেসে ও পচে গেছে। নষ্ট হয়েছে খামারের জন্য সংরক্ষিত পোলট্রি ফিডও। এসব কারণে অত্র  এলাকার প্রায় ১৫ হাজার খামারি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আর তাদের মধ্যে অধিকাংশই ব্যাংক, এনজিও এবং স্থানীয় ডিলারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণগ্রস্ত বলে জানা গেছে। খামারের ক্ষতির সাথে ঋণের বোঝা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।

প্রবাস ফেরত ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের আব্দুল কুদ্দুস দুই বছর আগে নিজের সঞ্চয় ও ঋণের টাকায় এক সাথে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী পোলট্রি খামারের উদ্যোক্তা হয়েছিলেন। তিনি জানান, বন্যায় আমার প্রায় ৫ হাজার মুরগি মারা গেছে। মুরগির জন্য মজুদ রাখা খাবার ডুবে গেছে, খামারের জিনিসপত্র ভেসে গেছে। সব হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।”

জেলার সোনাগাজী থানার খামারি আমজাদ হোসেন জানান, বন্যায় ১৫ দিন বয়সী দেড় হাজার মুরগি মারা গেছে। খাবার ও খামারের সব জিনিসপত্র বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। কোনো কিছুই সরাতে পারিনি। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”

২০১৮ সালে বেসরকারী হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হতে পোলট্রি খামার করেছিলেন লক্ষীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের মাকছুদুর রহমান। ১২শ মুরগি দিয়ে শুরু করা খামার বাড়াতে বাড়াতে পৌঁছেছিলো সাড়ে ৩ হাজারে। কিন্তু বন্যায় তার কমপক্ষে তিন লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের খামারি নূরউদ্দিন মুছাপুরী তার ব্রয়লার খামারের ৮ হাজার মুরগি মারা যাওয়ার তথ্য দিয়ে বলেন, টাকার জোগাড় করে আবার খামার শুরু করতে অন্তত ২ মাস লাগবে। আর সে মুরগি বিক্রি উপযোগী করতে লাগবে অন্তত আরো এক মাস। ফলে শুধু ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ৩ মাসের বেশি সময় লাগবে।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পোলট্রি ডিলার হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া জানান, তার এলাকায় বন্যার প্রভাব কম পড়লেও প্রায় ৩০ শতাংশ খামার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্যায় মুরগির খামার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে মুরগির মাংস ও ডিমের সরবরাহ ও মূল্যের ওপর। সরবরাহ কমেছে। বেড়েছে বাজার দর। এ প্রসঙ্গে দেশীয় পোলট্রি কোম্পানী কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, মুরগি ও ডিমের দাম, সরবরাহ ও চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

বন্যার কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাজার দর বেড়েছে। ২০২৩ সালের বন্যার পরেও ডিমের দাম বেড়েছিলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এবারের বন্যায় দাম বাড়াই স্বাভাবিক। তবে তিনি জানান, আমাদের কোম্পানী (কাজী ফার্মস) এখনো কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দ্বারা পূর্বে নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে পাইকারি দরে ডিম বিক্রয় করছে। একই সাথে সরকার ঘোষিত সর্বোচ্চ মূল্যের তুলনায় কম দামে ব্রয়লার মুরগিও বিক্রয় করছে।”
 

আরও পড়ুন

×