ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মাতারবাড়ী নিয়ে ভারত-চীনের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের

মাতারবাড়ী নিয়ে ভারত-চীনের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। ছবি-নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ | ০৯:১০

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে ভূরাজনীতি রয়েছে। এ রাজনীতির তাৎপর্যও আছে। গভীর সমুদ্রবন্দরটি ভারত, না চীন নির্মাণ করবে– এ নিয়ে বহু বছর ধরে টানাপোড়েন চলছিল। তবে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর খুব প্রয়োজন।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের দ্বিতীয় একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন। 

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জাপানের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাপান সবচেয়ে কম সুদে ঋণ দেয়। তাদের প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়। দুর্নীতিও কম হয়। মেট্রোরেল তার প্রমাণ। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো জাপানও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর। জাপানি নাগরিকদের অন্য দেশে দুর্নীতিতে নিজেদের আইনে বিচার করে তারা। জাপানি প্রকল্পে দেশীয় ঠিকাদাররাও দুর্নীতি করেছে– এমন প্রমাণ নেই। এ কারণে জাপানকে খুব নিরাপদ মনে হয়। 

গতকাল একনেক বৈঠকে চারটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের অংশ থেকে সাত হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। ১৬ হাজার ১২ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ। এ ছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৫৪ কোটি টাকা। অনুমোদন হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি নতুন ও দুটি সংশোধিত। এ ছাড়া বৈঠকে ব্যয় না বাড়িয়ে সাতটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। 

একনেক বৈঠকে ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, মাতারবাড়ী বন্দরে প্রয়োজনীয় কাজ এখনও শুরু হয়নি এবং বন্দরের উন্নয়নে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এটি একটি বড় প্রকল্প। প্রকল্পটির ভূরাজনৈতিক দিকও রয়েছে। 

উপদেষ্টা বলেন, দেশে দুর্নীতি কিছুটা কমেছে। তবে চাঁদাবাজি তেমন কমেনি। তিনি বলেন, চলতি প্রকল্পগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। তাই সময় লাগছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম হওয়ায় প্রকল্প ধীরগতিতে এগোলে অর্থ প্রবাহ বাড়বে না। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রকল্পের আওতায় বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ কিংবা গাড়ি কেনার চেয়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা বাড়ানো, পার্ক ও লাইব্রেরি নির্মাণ, জলাধার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এত দিন সরকারি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে কতগুলো গাড়ি কেনা হয়েছে, সেগুলো কোথায় আছে, কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সব খতিয়ে দেখবে সরকার। তিনি বলেন বর্তমান সরকার বিবিএসের জন্য নতুন নীতি নেবে। যেখানে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবে। 

সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল-কাম সড়ক সেতু। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। সাজেক রোড কানেকটিভিটি প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ শীর্ষক সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয়  বাড়ানো হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনী হিসেবে ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা বাড়িয়ে রেসিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  

একনেক বৈঠকে অর্থ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ; পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; আইন, বিচার ও সংসদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, ভূমি উপদেষ্টা হাসান আরিফ; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। 

দুর্নীতি রোধ চান এনজিও প্রতিনিধিরা

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি বন্ধ চান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-এনজিওর প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে বিরাট অবদান রেখেছে এনজিও। কিন্তু তাদের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে বৈঠকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মোট ৭৮ জন এনজিও প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. সেলিম রায়হানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

ড. দেবপ্রিয় বলেন, যে কোনো কাজে উৎসাহ না দিলে সে কাজ ভালো হয় না। এনজিও উন্নয়নে অনেক অবদান রাখলেও তার কোনো স্বীকৃতি ছিল না। ফলে দেশের মানুষও তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারেনি। এনজিও প্রতিনিধিরা বলেছেন, উন্নয়নে বড় অংশীদার হলেও তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে না। এর ফলে তারা বৈষম্যের শিকার হন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা জোরদার করতে হবে।

আরও পড়ুন

×