ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

কী ঘটেছিল সেদিন

কী ঘটেছিল সেদিন

আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের গ্রেনেড হামলা হয়। ছবি: ফাইল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪০ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৪:৪৪

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাইকোর্টে নতুন করে শুরু হওয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানিতে আজ রোববার এ রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এর আগে ২১ নভেম্বর এই মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন (সিএভি) হাইকোর্ট। 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ২৩ অক্টোবর এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির দপ্তর থেকে হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠানো হয়। এরপর ৩১ অক্টোবর হাইকোর্টের এই বেঞ্চ মামলার পেপারবুক পাঠের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের শুনানির মধ্য দিয়ে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। আজ মামলাটির রায় ঘোষণা হলো।

কী ঘটেছিল সেদিন

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, শনিবার। আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চারপাশে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রতিবাদে সেদিন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ডাকে সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিল হওয়ার কথা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার এই শান্তি মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেওয়ার শেষ মুহূর্তেই শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে রক্তস্রোতে ভেসে যায় বহু মানুষ। চারদিকে মানবদেহের ছিন্নভিন্ন টুকরো ছড়িয়ে পড়ে। হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সবাই।

ওই গ্রেনেড হামলায় নিহত হন ২৪ জন। আহত হয় প্রায় ৩০০ মানুষ। তবে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। মানববর্ম রচনা করে  তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেন দলের নেতাকর্মীরা। এরপরও তার গাড়ি লক্ষ্য করে ১২টি গুলি ছোড়া হয়। এই গুলিবর্ষণ থেকেও প্রাণে বেঁচে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। 

সেদিন যারা প্রাণ হারান তাদের মধ্যে রয়েছেন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান মারা যান ২৪ আগস্ট। 

আরও নিহত হন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), ঢাকা মহানগরের ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া বেগম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা মমতাজ রীনা, মহিলা আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিয়া বেগম, জাতীয় শ্রমিক লীগ কর্মী নাসির উদ্দিন সর্দার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড রিকশা শ্রমিক লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হানিফ, ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন, যুবলীগ বালুঘাট ইউনিটের সভাপতি ও ক্যান্টনমেন্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি লিটন মুন্সী লিটু, ৮৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আতিক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কর্মী ও রি- রোলিং মিল ব্যবসায়ী রতন সিকদার, ছাত্রলীগ কর্মী ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুন মৃধা, জামালপুর আওয়ামী লীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ কৰ্মী ইছহাক মিয়া, মো. শামসুদ্দিন, মমিন আলী, আবুল কাসেম ও জাহেদ আলী। এ ছাড়া আরও দু'জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। যাদের পরিচয় মেলেনি।

শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানবঢাল তৈরি করা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মাথায় অসংখ্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। প্রায় আড়াই বছর যন্ত্রণা ভোগ এবং দেশ-বিদেশে চিকিৎসার পর ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর মারা যান তিনি। গত কয়েক বছরে এই গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন

×