ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের বৈঠক

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬:৪২ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৫১

চলমান বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় ও জাতীয় ঐক্যে নিয়ে মতবিনিময় করতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে কে কে উপস্থিত রয়েছেন বা কারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন তা জানা যায়নি। 

এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নিয়ে ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে, বুধবার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা এবং বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এ বৈঠক হবে। এতে সরকারের উপদেষ্টারা অংশ নেবেন।

এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সন্ধ্যায় যমুনার এ বৈঠক শেষে ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে তারা সরকারের কাছে ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের করা সব গোপন চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাণিজ্য হলে তা যেন হয় ন্যায্যতার ভিত্তিতে।

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খুচরাভাবে কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আগে দেখা হয়েছে। আজ অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, ভালো হলো। তোমরা সরকারের কাছে কী চাচ্ছো, আশাগুলো কী, পরামর্শ আছে কিনা– এটি জানতে চাওয়া। তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক; তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র– এ ভূমিকা ভুলে যেও না। তোমাদের দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র যেন ঠিক পথে চলে, যেন বিচ্যুত না হয়।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কতগুলো লোক বাজারমূল্য কবজা করে থাকবে, সেটি হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখার। রমজানেও সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের শহীদদের অবদান আমরা ভুলব না। তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন– শিক্ষার্থীদের এমন পরামর্শ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। দেশে কেউ যেন শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য পরিকল্পিতভাবে এটি হয়েছে। এটি ঠিক করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব– এটি ঠিক। সরকারের নিজের কোনো পত্রিকা নেই। আছে শুধু প্রেস উইং। তারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠায়। কেউ ছাপে, কেউ ছাপে না কিংবা তাদের মনমতো কোনায় ছোট করে দেয়। তিনি বলেন, সরকার কোনো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবে না। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করবে– এটাই আমাদের নীতি। আমরা এ নীতিতে থাকব। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার দায় আওয়ামী লীগের। তবে যারা উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে ঘোষণা দিয়েছে, তাদেরও ধরতে হবে। যেদিকে হাত দিই, সেদিকেই ভাঙাচোরা। এই ভাঙাচোরা পরিষ্কার করেই যাচ্ছি। কাজ শুরু করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কারকাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা করে– এ বিশ্বাস ধরে রেখ। তোমরা কখনোই আশাহত হবে না। তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছ; দেশ বদলে ফেলেছ। তোমরা এক বিজয় করেছ; আরেক বিজয়ও আসবে। তোমরা বারবার মনে করিয়ে দেবে যেন আমরাও সতর্ক হই, সজাগ হই। মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম, সারজিস আলম, রিফাত রশিদ, আবদুল কাদের প্রমুখ অংশ নেন।

আগের দিন বুধবার বিকেলে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের ছিলেন ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়া জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছেন বৈঠকে।

একই সময়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সেখানে পৌঁছান। তবে কর্নেল অলি পরে ফিরে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তালিকায় নাম না থাকায় তিনি প্রবেশ করতে পারেননি।
 

আরও পড়ুন

×