ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

‘বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমন্বিত মহাপরিকল্পনা হয়েছে জাপানি কোম্পানির লাভ নিশ্চিত করতে’

‘বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমন্বিত মহাপরিকল্পনা হয়েছে জাপানি কোম্পানির লাভ নিশ্চিত করতে’

ঢাকায় অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি-২০৫০ সম্মেলনে’র দ্বিতীয় দিনে অতিথিরা।

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:২৪ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:২৬

বাংলাদেশের সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনাটি অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক এবং প্যারিস চুক্তি ও জি৭ এর বিভিন্ন অঙ্গীকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি আমাদের নিট জিরো লক্ষ্যকেও খর্ব করে। জাপানের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি এই মহাপরিকল্পনাটি বানানোই হয়েছে ওই দেশের কোম্পানির সর্বোচ্চ লাভ নিশ্চিত করতে। উদ্বৃত্ত এলএনজি বিক্রির লক্ষ্য সামনে রেখে জাপান বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনার তৈরিতে সহযোগিতা করেছে।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি-২০৫০ সম্মেলনে’র দ্বিতীয় দিনে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে জাপান সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটির (জেএসিএসইএস) প্রকল্প পরিচালক ইউকি তানাবে বলেছেন, নিজেদের উদ্বৃত্ত এলএনজি এশিয়ার দেশগুলোর কাছে বিক্রির একটি লক্ষ্য রয়েছে জাপানের। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানির মহাপরিকল্পনাটি বানানোর ক্ষেত্রেও জাইকা সেই বিষয়টি মাথায় রেখেছে। জাপানি কোম্পানিগুলোর সর্বোচ্চ লাভ যাতে নিশ্চিত হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিবেচনায় এই মহাপরিকল্পনাটি মোটেও কার্যকর হবে না, কেননা এতে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেন কো-ফায়ারিং ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে, এটি নবায়নযোগ্য শক্তির চেয়ে ৪ গুণ বেশি ব্যয়বহুল।

ইউকি আরও বলেন, এই আইইপিএমপি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়। এতে উন্নত প্রযুক্তির নামে মিথ্যা ও ব্যয়বহুল সমাধানের কথা উল্লেখ রয়েছে এবং এই অপরীক্ষিত প্রযুক্তিগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির তুলনায় খুবই ব্যয়বহুল। তাই, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনাটির ব্যাপক সংশোধন প্রয়োজন এবং জাপানের উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জ্বালানি রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করা।

অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়া প্রযুক্তিগুলো প্রয়োগ করা উচিত নয়। তবে যখন নতুন এই প্রযুক্তিগুলো কার্যকর বলে প্রমাণিত হবে এবং সার্বিকভাবে প্রযুক্তিগুলোর আরও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে, তখন প্রয়োজন মতো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা সংশোধন করা যাবে।

ইচিগুচি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা একটি জীবন্ত দলিল। তাই পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে এই মাস্টার প্ল্যানও সংশোধন হওয়া উচিত। জাইকা বাংলাদেশেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ এবং একই সঙ্গে জ্বালানি দক্ষতার লক্ষ্য অর্জনেও সহায়তা করেছে এবং করবে।

বাংলাদেশে ন্যায্য রূপান্তরে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারীত্বের ভূমিকা শীর্ষক অধিবেশনে দেশে জ্বালানি রূপান্তর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক অংশীদার চীন ও নেপালের বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপরও আলোকপাত করা হয়।

এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিকের সমন্বয়ক বারিশ হাসান চৌধুরী, অয়েল চেইঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের (ওসিআই) জাপান ফাইন্যান্স ক্যাম্পেইনার মাকিকো আরিমা অধিবেশনটি পরিচালনা করেন।

ন্যায্য ও টেকসই অর্থায়ন বিষয়ক আরেক অধিবেশনে বক্তারা আর্থিক খাতে জবাবদিহিতা, কমপ্লায়েন্স ও সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের শ্রেণিবিন্যাসের কাঠামো সংশোধন এবং বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতেও বলেন, যেখানে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক নীতি, প্রকল্পের নথিপত্র ও ইএসজি প্রতিবেদন প্রকাশ নিশ্চিত করবে।

নীতিনির্ধারক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন অংশীদার, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারী ও অর্থদাতা, নাগরিক সমাজের নানান সংগঠন ও তরুণ-যুবাসহ ৩০০-র বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এবারের তিনদিনব্যাপী দ্বিতীয় ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি-২০৫০’ সম্মেলনে একত্রিত হয়েছেন। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন

×