দাবি পূরণের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের

.
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:২২ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৮:২২
দাবি পূরণে সরকার থেকে আশ্বস্ত করার পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট থানা ঘেরাও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বন্ধ করার কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা এ ঘোষণা দেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র) খোদা বখস চৌধুরী, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ ও ইডেন মহিলা কলেজের সাদিয়া আফরিন মৌ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে ডেকে সংকট ও তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে মতামত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীরও খোঁজ নেন।
বৈঠক শেষে রাতে অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ডেকেছিলেন। অত্যন্ত ভালো আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক কিছু আসছে। আমরা কাজ করছি। দুদিন পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারব।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার আমাদের ছয় দাবির বিষয়ে ইতিবাচক। যেগুলো তাৎক্ষণিক পূরণ করা সম্ভব, সেগুলো করেছে। ফলে আমরা আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি উপস্থাপন করেছি। বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগুলো মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’
মঈনুল বলেন, সংঘর্ষের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদকে ক্ষমা প্রার্থনা করে পদত্যাগ করার দাবি করেছি। আমাদের বলা হয়েছে, মামুন আহমেদ এখন থেকে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের সংশ্লিষ্ট কোনো কমিটির সঙ্গে থাকবেন না। পদত্যাগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে এগোনো হবে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের আক্রমণের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এ জন্য তিন দিন সময় নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ কিছু বিষয়ের সমাধান হবে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বসব, তখন। এ বিষয়েও সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি ও সমস্যা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়েছে। আমরা সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
‘না জানিয়ে অধিভুক্তি বাতিল করেছে ঢাবি’
গতকাল দুপুরে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকারকে কোনো কিছু না জানিয়ে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের (সাত কলেজে) এ বছর থেকেই ভর্তি করা হবে না, এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি বলেন, সাত কলেজ নিয়ে এখন যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের পথ ভেবে পাচ্ছি না। কারণ, এ বছরই ভর্তি বন্ধে ঢাবির সিদ্ধান্তে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সাত কলেজকে নিয়ে একটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কাঠামো তৈরির মডেল নিয়ে কাজ করছিল। এর পরও যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই দুঃখজনক।
পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসিতে সভা
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে নিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) সভা হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, অধ্যাপক সাইদুর রহমান, কমিশনের সচিব ফখরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক জামাল উদ্দিন প্রমুখ অংশ নেন।
সভা শেষে ফখরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের চলমান পরীক্ষাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই শেষ হবে। সভায় দুটি গ্রুপ করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। সভায় উঠে আসে, বর্তমানের সব শিক্ষার্থী পাস করে বের হতে আরও পাঁচ থেকে সাত বছর লাগবে।
- বিষয় :
- সাত কলেজ