বিএফএসএর সেমিনারে বক্তারা
অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে বছরে মারা যান ৩৫ হাজার মানুষ

ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২১:১৯
দেহে পুষ্টির সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে অনিরাপদ খাদ্য। এ অনিরাপদ খাবার গ্রহণের ফলে শিশু, গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা তৈরি হয়। এ কারণে দেশে দৈনিক ৫ শতাংশ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া অনিরাপদ খাদ্যের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ মারা যান। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিত করতে কেনার সময় যাচাই-বাছাই করা ও তেলের ক্ষেত্রে চর্বির পরিমাণ খতিয়ে দেখা দরকার।
রোববার জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর শাহবাগে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘খাদ্য হোক নিরাপদ, সুস্থ থাকুক জনগণ’।
সেমিনারে খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কেননা বর্তমানে বিশ্বে ৭০০ বিলিয়ন লোকের খাদ্য কত নিরাপদ সেই প্রশ্ন জেগেছে।
তিনি বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে দিনে ৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে নানা কারণে খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ইকোনাইটের সংক্রমণে সবজি পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে সবজি রপ্তানি করতেও সমস্যায় পড়তে হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ব্যাকটেরিয়া, কেমিক্যাল, কাঁচের টুকরা ইত্যাদির কারণে খাদ্য অনিরাপদ হয়। তাছাড়া পানিবাহিত ভাইরাস, বিষাক্ত পদার্থের কারণেও অনিরাপদ হয়। এ খাদ্যের কারণে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মারা যায়।
খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাবারে অনেক ভেজাল রয়েছে। ঘির মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬৭, গুড়ে ৪৩ দশমিক ৭৫, মধুতে ৩৩ দশমিক ৩৩, মিষ্টিতে ২৮দশমিক ৫৭, হলুদে ২৭দশমিক ৯৩, ডাল ও ছোলায় ৫, চালে ৮ দশমিক ৩৩, মরিচে ১৪ দশমিক ৬৩, গুঁড়া দুধে ১৬ দশমিক ৬৭ এবং লবণে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভেজাল রয়েছে।
খাদ্য নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে ড. খালেদা ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপদ রাখতে হলে খাবার পরিষ্কার রাখা, রান্না ও কাঁচাখাবার একসঙ্গে না রাখা, রান্নার সময় ঢাকনা দেওয়া, খাবার সঠিক তাপমাত্রায় রাখা এবং রান্নায় নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, বাজার থেকে ফল, শাক-সবজি কেনার সময় রঙ ঠিক আছে কি না তা দেখতে হবে। মৌসুমী ফল, শাক-সবজি কিনতে হবে। পচা বা গন্ধযুক্ত খাবার কেনা যাবে না। হাত দিয়ে দেখতে হবে। তেলের ক্ষেত্রে চর্বির পরিমাণ কতটা সেটা দেখতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, দেশে দৈনিক ৮০ জন ও বছরে ৩০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল খালেক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম প্রমুখ।
- বিষয় :
- পুষ্টি
- অনিরাপদ খাদ্য
- সেমিনার