ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জ্বালানি সংকট

এলএনজিতে সমাধান দেখছে এ সরকারও

গত বছরের চেয়ে বেশি কেনা হবে ৩১ কার্গো

এলএনজিতে সমাধান দেখছে এ সরকারও

ফাইল ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:১০ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৮:৪১

গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে এলএনজির আমদানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত বছরের চেয়ে ৩১ কার্গো বেশি এলএনজি কেনা হবে। এ জন্য বাড়তি ভর্তুকি লাগবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির বিষয়ে একাধিক দেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চুক্তি সই করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস এলএনজি করে নদীপথে মূল ভূখণ্ডে আনা হবে। এ জন্য শিগগির দরপত্র ডাকা হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ সূত্র।

দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৭১ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানি করা এলএনজি থেকে মিলছে ৮৩ কোটি ঘনফুট। গত বছর মোট ৮৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। 

চরম গ্যাস সংকটে ভুগছে দেশ। দেশীয় উৎপাদনও দিন দিন কমেছে। স্বল্প মেয়াদে গ্যাস সংকট কাটাতে এলএনজির ওপরেই জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আপাতত সমাধান হিসেবে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে। চলতি বছর আমরা ১১৫ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা করেছি। এ জন্য অতিরিক্ত ১৬ হাজার কোটি টাকা লাগবে। 

তিনি আরও বলেন, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম সবসময় একই থাকে না। তাই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বেশি করে এলএনজি কেনার চেষ্টা করেছি। কয়েকটি দেশ থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। এর মধ্যে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে দুই-এক দিনের মধ্যে চুক্তি করব। কাতারের সঙ্গে যে চুক্তি রয়েছে, তার মতোই দাম হতে পারে। ব্রুনাই থেকে বছরে ২০ কার্গো এলএনজি কেনা হতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুধু নির্বাচিত কয়েকটি কোম্পানি থেকে এলএনজি কেনা হতো। জ্বালানি সরবরাহের বিশেষ বিধান বাতিল হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনিজি আমদানিতে জটিলতা হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এখন চুক্তিবদ্ধ সব কোম্পানি সমান সুযোগ পাবে। তাই সমস্যা হবে না।

জ্বালানি বিভাগ জানায়, ভোলার চাহিদার তুলনায় বেশি গ্যাস রয়েছে। এখন সেখান থেকে স্বল্প পরিসরে সিএনজি করে গ্যাস আনা হচ্ছে। কিন্তু সিএনজি করে গ্যাস আনা বিপজ্জনক ও ব্যয়বহুল। তাই ভোলা থেকে অতিরিক্ত গ্যাস এলএনজি আকারে মূল ভূখণ্ডে এনে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এ জন্য শিগগির দরপত্র আহ্বান করা হবে। ভোলা থেকে দিনে ৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস আনা যাবে বলে জানা গেছে। 

এ ছাড়া এলএনজির সরবরাহ সক্ষমতা বাড়াতে মাতারবাড়ীতে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল নির্মাণে দরপত্র ডাকার কাজ চলছে। এলএনজি আমদানির কারণে জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে কয়েক গুণ। অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তিগত স্বার্থে গত আওয়ামী লীগ সরকারের জ্বালানি খাতের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন না বাড়িয়ে এলএনজি আমদানির দিকে বেশি জোর দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে জ্বালানি সচিব বলেন, এলএনজি আমদানি দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা। কষ্ট করে ডলার আয় করা হয়। এর একটা বড় অংশই জ্বালানি বাবদ বিল দিতেই খরচ হয়। সপ্তাহে জ্বালানি খাতে ১৮ কোটি ডলার লাগে। বছরে এলএনজি কিনতে ৫৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। ৭২ টাকা প্রতি ঘনমিটার এলএনজি কিনে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই সরকার দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১০০ কূপ খনন করা হচ্ছে। বাপেক্সের জন্য কেনা হচ্ছে তিনটি নতুন রিগ। 

২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি দুই টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে বছরে ১১৫টি এলএনজি কার্গো হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ৫৬টি কার্গো আসছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়। কাতার থেকে আসে ৪০টি এবং ওমান থেকে ১৬টি। খোলা বাজার থেকে ২৪টি কার্গো আমদানি করা হয়। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ৪৫৪ কার্গো। এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২৫৪ কার্গো, ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ওমান থেকে ১১৮ কার্গো এবং স্পট মার্কেট থেকে ৮২ কার্গো আমদানি করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×