ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সেমিনারে ভাষা গবেষকরা

ইংরেজি-বাংলার আগ্রাসনে সংকুচিত নৃগোষ্ঠীর ভাষা

ইংরেজি-বাংলার আগ্রাসনে সংকুচিত নৃগোষ্ঠীর ভাষা

ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২:৫৮

ইংরেজি ও বাংলা ভাষার আগ্রাসনে দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা সংকুচিত হচ্ছে। একইভাবে নীতির সংকটে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। ফলে বাংলা ভাষাও সংকুচিত হচ্ছে।

রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে ভাষা গবেষকরা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট দুই দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজক।

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, জাতি গঠনে বৈচিত্র্যের জন্য মাতৃভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষাগত বৈচিত্র্যের লালন ও সুরক্ষার ওপর জোর দিতে হবে, যাতে ভাষার কারণে কোনো বিরোধ ও বৈষম্যের সৃষ্টি না হয়। সব ভাষার প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, দেশে বাংলাসহ ৪১টি ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১৪টি ভাষা বিপন্নপ্রায়। এর মধ্যে খাড়িয়া ভাষায় মাত্র দু’জন কথা বলেন, দুই বোন তারা। তাদের মৃত্যুতে এ ভাষাটিও হারিয়ে যাবে। জাতিসংঘে বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য এখনই প্রশ্ন তুলতে হবে। দেশের সংবিধান ও আইনে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কথা রয়েছে। কিন্তু এটি এখনও কার্যকর হয়নি। আদালতে সমানে ইংরেজি ব্যবহার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নামেই আন্তর্জাতিক। আমরা আশাবাদী নতুন নেতৃত্বে ইনস্টিটিউট লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাবে।

ঢাবির আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক মনসুর মুসা বলেন, ইংরেজি ও বাংলা ভাষার ব্যবহার বহুবিধ। সংবিধানে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হয়েছে স্বীকৃতির মাধ্যমে। বাংলা ভাষার অবয়ব পরিকল্পনা হয়নি এখনও। আমাদের জ্ঞানের জগৎ অত্যন্ত পশ্চাৎপদ। ভাষানীতি প্রণয়নসহ সার্বিক বিষয়ে সরকারের কাঠামো প্রণয়ন করা জরুরি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তৃতা করেন ঢাবির ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গুলশান আরা বেগম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ।

সেমিনারের শেষ দিনে রোববার চারটি বিষয়ে পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাষা গবেষকরা। ‘মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষা: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে নানা সমস্যা আছে। যদিও কিছু মানুষ ভাষাকে জাগ্রত করছে। অন্য ভাষাগুলোর অবস্থা শোচনীয়। বিভিন্ন ভাষা থেকে মাতৃভাষায় শেখানোটা জোরদার হলে সংকট কেটে যাবে।

তিনি বলেন, সরকারি কাঠামোতে ইংরেজি ভাষাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইংরেজি যত বেশি বিস্তৃত হবে মাতৃভাষা বাংলা ততই সংকুচিত হবে। অসমতা তৈরি করছে। বাংলা ভাষাও একইভাবে আদিবাসীদের ভাষাকে সংকুচিত করছে। এ ভাষার আগ্রাসন ক্রমশই বাড়ছে। শিক্ষার সূত্রপাত হবে মাতৃভাষায়। এ জন্য সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকা দরকার। পাশাপাশি কৌশল, নিরাপদ পরিবেশ, শক্তিশালী প্রচারাভিযান ও টেকসই অর্থায়ন থাকতে হবে।

‘মাতৃভাষা আশ্রয়ী শিক্ষায় প্রমিত বাংলার প্রয়োগ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এ ভাষার গুরুত্ব যেন অবহেলায় পরিণত না হয়।

সেমিনারে পৃথক অধিবেশন ‘উচ্চ শিক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষার ব্যবহার: প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেটের পাসকপের প্রধান নির্বাহী গৌরাঙ্গ পাত্র এবং ঢাবির তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদুল কবির ‘মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান বলেন, প্রশ্নটা অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারিত হচ্ছে, আমরা কতটা সফল হচ্ছি? তবে এটি মনে রাখা উচিত প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১০ সালে শুরু হয়েছে। আমরা লক্ষ্যপূরণে চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন

×