ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র: কয়লায় মাটি, চালান ফেরত

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র: কয়লায় মাটি, চালান ফেরত

ফাইল ছবি

সমকাল প্র‌তিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫ | ০১:২৫ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ | ১১:২০

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা একটি চালানে নিম্নমানের কয়লা (মাটিমিশ্রিত) পাওয়া গেছে। তাই জাহাজটি ফিরিয়ে দিয়েছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল)। 

সিপিজিসিবিএল সূত্রে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সংগ্রহের কাজ পায় বাংলাদেশের মেঘনা গ্রুপের কোম্পানি ইউনিক সিমেন্ট এবং ভারতের আদিত্য বিড়লা গ্লোবাল ট্রেডিং (সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত) কনসোর্টিয়াম। প্রায় ৬৩  হাজার টন কয়লা নিয়ে এমভি ওরিয়েন্ট অর্কিড নামের জাহাজটি গত ১৭ মার্চ মাতারবাড়ী চ্যানেলে প্রবেশ করে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ২২ হাজার ৩৫০ টন কয়লা নামানো (আনলোড) হয়। কয়লা আনলোড করার সময় কনভেয়ার বেল্ট বারবার বিকল হচ্ছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকৌশলীরা কয়লা যাচাই করে দেখেন, নিম্নমানের কয়লা আনা হয়েছে। কয়লার সঙ্গে প্রচুর মাটি মিশ্রিত। পরে খালাস বন্ধ করে দিয়ে ৪০ হাজার ৬৫০ টন কয়লাসহ জাহাজটিকে বহির্নোঙরে পাঠানো হয়। বর্তমানে জাহাজটি বহির্নোঙরে আছে। খালাস করা কয়লার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিপিজিসিবিএল। 

সিপিজিসিবিএলের ভারপ্রাপ্ত এমডি নাজমুল হক শ‌নিবার সমকালকে জানান, কয়লা মানসম্মত না হওয়ায় তারা চালান গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গত শুক্রবার সরবরাহকারীকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আলোচনায় দরপত্র
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিন বছরে ৯৬ লাখ টন কয়লা সরবরাহের জন্য ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রটি কয়লা ক্রয় সম্পর্কিত হওয়ায় মূল দরপত্রের ‘টেকনিক্যাল ক্রাইটেরিয়া’ অংশে কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্ত উল্লেখ ছিল। কিন্তু বিশেষ গ্রুপকে সুবিধা দিতে দরপত্রের কারিগরি অংশে পরপর চারটি সংশোধনীর মাধ্যমে কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্তটি পরিবর্তন করে কয়লা অথবা লোহা, সার, কেমিক্যাল, সিমেন্ট, খাদ্যশস্য আমদানির অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের আদিত্য বিড়লা কনসোর্টিয়ামসহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠান ওই দরপত্রে অংশ নেয়। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই ‘টেকনিক্যালি নন-রেসপন্সিভ’ হিসেবে বাদ দিয়ে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আদিত্য বিড়লা কনসোর্টিয়ামকে গত ১ মে টেকনিক্যালি রেসপন্সিভ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর পর গত ৮ মে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি আদিত্য বিড়লা কনসোর্টিয়ামের আর্থিক প্রস্তাবটি খুলে দেখে, তারা প্রতি টন কয়লার সরবরাহ মূল্য ১০৮ দশমিক ৮৭ মার্কিন ডলারের প্রস্তাব করেছে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি আদিত্য বিড়লা কনসোর্টিয়ামের আর্থিক প্রস্তাবটি মূল্যায়ন করে জানায়, উচ্চ মূল্য বলে ৯৬ লাখ টন কয়লা সরবরাহের একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। বাতিল হওয়া তিন কনসোর্টিয়ামের একটি গত ২৯ মে বিদ্যুৎ বিভাগে দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করে। ৩১ মে সিপিজিসিবিএলের বোর্ড সভায় জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বাতিলকৃত ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে সমঝোতার মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

সিপিজিসিবিএল কর্তৃপক্ষ আদিত্য বিড়লা কনসোর্টিয়ামের অনুকূলে ছাড়পত্র ইস্যু না করায় প্রতিষ্ঠানটি গত ১ ও ৮ জুলাই অভিযোগ দায়ের করে। এভাবে বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে সমেঝাতার মাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর আদিত্য বিড়লা কনসোর্টিয়ামকে ৩৫ লাখ টন কয়লা ১০৫ দশমিক ৮৭ ডলার দরে সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়।

আরও পড়ুন

×