ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

খাদ্য

কটকটিতে জীবন রঙিন

কটকটিতে জীবন রঙিন

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রতিদিন বহুসংখ্যক পর্যটক আসেন। পুরাকীর্তি, গড় ও মাজার দেখে মুগ্ধ হন। যে জিনিসটি সবার হাতে থাকে, তা হলো কটকটির প্যাকেট। ছবি: সমকাল

 লিমন বাসার, উত্তরাঞ্চল

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫ | ০১:১৮ | আপডেট: ১২ মে ২০২৫ | ১১:৫৬

দেখতে খয়েরি রঙের ছোট চারকোনা আকার। মুখে দিলে কড়মড় শব্দে গলে যায় গুড়, চালের আটা আর তেলের মিশেল। মনে হয়, আধুনিক জীবনে ঢুকে গেল পুরোনো এক স্বাদ।

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসেন। এখানকার পুরাকীর্তি, প্রাচীন গড় ও মাজার দেখে মুগ্ধ হন। কিন্তু যে জিনিসটি প্রায় সবার হাতে থাকে, তা হলো কটকটির প্যাকেট। এভাবে অর্থনৈতিক বিকাশ ও স্বাবলম্বিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে এই খাদ্যদ্রব্য।

কটকটির উৎপত্তি হয়েছিল স্থানীয় শুকনো খাবার হিসেবে। স্থানীয় মাজারে আসা ভক্তরা শিরনি হিসেবে এটি গ্রহণ করতেন। শিশুখাদ্য হিসেবেও এর গ্রহণযোগ্যতা অত্যধিক। তবে ক্রমে এটি বড়দের সকাল বা বিকেলের নাশতায় স্থান করে নিয়েছে।

শুধু কটকটি তৈরি করে এখন হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে এখানে ৫০-৬০টি কারখানা তৈরি হয়েছে। চার শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। স্থানীয় নারীরা কাজ করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন।

চালের আটা দিয়ে তৈরি করা খাবারটি প্রথমে রোদে শুকানো হতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশল বদলেছে। এখন এটি তেলে ভেজে প্রস্তুত করা হয়। পরিবর্তন এলেও, কটকটির মূল স্বাদ আজও গুড়ের মিষ্টতায় টিকে রয়েছে।

বর্তমানে কটকটি তৈরিতে সুগন্ধি চালের পরিবর্তে ৩৩ এবং মামুন জাত (বিশেষ ধরনের মোটা চাল) ব্যবহার করা হয়, যা কম খরচে পাওয়া যায়। সঙ্গে গুড় এবং পাম অয়েল ব্যবহার হয়। এই কটকটি কিছুটা শক্ত হয়। আর সেরা মানের কটকটি তৈরিতে ডালডা, কালিজিরা, তেজপাতা, ঘি ও বাদাম ব্যবহার করা হয়। এটি পণ্যটিকে নরম, সুস্বাদু এবং মচমচে করে তোলে।

শ্রমিক কাজলি বেগম জানান, তিনি ২৫-৩০ বছর ধরে এই কাজে যুক্ত। বিশ বছর আগে শুরুতে দিনে ৬০ টাকা মজুরি পেতেন। এখন দিনে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা পান। বিশেষ দিনে এই মজুরি ওভারটাইমসহ ৬০০-৭০০ টাকা হয়ে যায়। এখন তাঁর সংসারে অভাব নেই। প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করে ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করছেন।

আঙ্গুরী বেগম চার বছর ধরে কটকটি তৈরির কারখানায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আগে ঢেঁকি কুটতাম। এখন কটকটি বানাই। ৪২০ টাকা মজুরি পাই। পরিবার নিয়ে চলতে পারছি।’

মহাস্থানগড়ে তৈরি কটকটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ মণ কটকটি উৎপাদন হয়। এর বাজারমূল্য গড়ে তিন লাখ টাকা। প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তবে ঘি দেওয়া শাহি কটকটির কেজি ৩০০ টাকা।

লাল মিয়া কটকটি ঘরের মালিক লাল মিয়া বলেন, বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবারের মেলায় তিনি তিন হাজার কেজি কটকটি বিক্রি করেছেন। ব্যবসায়ী সুলতান কটকটি বিক্রি করেছেন ৮০ মণ। 

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলাম বলেন, এটি শুধু ঐতিহ্য নয়, সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র শিল্প বলা চলে। সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং ঋণ পেলে এটি আরও বিস্তৃত হবে।

আরও পড়ুন

×