ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

লুটেরাদের জব্দ টাকা ব্যবস্থাপনায় আলাদা তহবিল হচ্ছে: গভর্নর

লুটেরাদের জব্দ টাকা ব্যবস্থাপনায় আলাদা তহবিল হচ্ছে: গভর্নর

ছবি: প্রেস উইং

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫ | ১৪:৪২ | আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ | ১৮:৩৯

ব্যাংক লুট বা বিভিন্ন উপায়ে অর্থ আত্মসাতকারীদের এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার দেশি-বিদেশি সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। লুটেরাদের জব্দ অর্থ ব্যবস্থাপনায় আলাদা তহবিল হচ্ছে। এর মধ্যে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ ব্যাংকগুলোকে ফেরত দেওয়া হবে। অন্য দুর্নীতি–জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দরিদ্রদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করবে বর্তমান সরকার।

আজ সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। দেশ থেকে অর্থপাচার কিংবা বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করে যারা পালিয়েছে তাদের তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য জানান তারা। এ সময় আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

শফিকুল আলম জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবার ও ১০ ব্যবসায়ী গ্রুপসহ বিভিন্ন ব্যক্তি লুটের অর্থের মধ্যে দেশের মধ্যে সংযুক্ত আছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, বৈদেশিক সংযুক্ত ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ অবস্থায় রয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা লুটের এসব টাকা ব্যবস্থাপনায় একটি তহবিল করতে বলেছেন। এই অর্থে একদিকে ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। আরেকটি অংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, ২০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব কেসের ক্ষেত্রে বিদেশি আইনি সংস্থার মাধ্যমে অর্থ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সম্ভাব্য ১২৫টি ঘটনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০টি আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা থেকে আবেদন পাওয়া গেছে। যতো দ্রুত পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যায় সে জন্য কাজ করা হচ্ছে। আমার মনে হয় না অর্থ পাচারকারীরা কেউ শান্তিতে আছে।

লুটের টাকায় তহবিল কোন আইনে করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত এবং আইনের সঠিক ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে করা হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা লাগতে পারে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নী জেনারেল কার্যালয় কাজ করবে। আর যদি বর্তমান আইন দিয়ে করা যায় সেটা করা হবে। তবে লক্ষ্যটা হচ্ছে একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করা। যেখান থেকে ব্যাংকগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে। কেননা, ব্যাংকগুলো বিশালভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ব্যাংকের টাকায় বেশি। আর যে সব অর্থ ব্যাংকের সঙ্গ সম্পৃক্ত নয়, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে সেসব অর্থ আলাদা একটি তহবিলে নিয়ে সরকার জনহিতকর কাজ করবে। তবে সবই করা হবে আইনগতভাবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই তহবিল গঠন করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, এই সরকার নতুন তহবিল গঠন ও ব্যবহার করতে পারবে। কেননা, ইতিমধ্যে এসব অর্থ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। দ্রুততম সময়ে তহবিলের কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। ব্যাংকটিতে এস আলমের ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। আবার ব্যাংকটিতে তাদের বড় অংকের ঋণ আছে। এরই মধ্যে ব্যাংকটির বড় অংকের মূলধন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। এখন জব্দ করা শেয়ার বিক্রির টাকা ব্যাংকে ফেরত দিলে একটি স্বস্তিজনক অবস্থা তৈরি হবে। এই শেয়ার একটা স্ট্রাটেজিক বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে হস্তান্তরের আগে সাময়িক সময়ের জন্য সরকারের মালিকানা নিতে হবে। কেননা আরেকজনের মালিকানা থাকা অবস্থায় কাউকে মালিকানা হস্তান্তর করা যায় না। এসব ব্যাংকে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক স্থায়ী মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে তেমন না। নতুন বিনিয়োগকারী আনতেই এটা করা হবে।

অর্থপাচারকারীরা তো এখন বিদেশে শান্তিতে আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থ উদ্ধারে সময় লাগবে। তবে পাচারকারীদের ঘুম নষ্ট করতে পারছি বলে মনে করি। আত্মসাকারীরা শান্তিতে আছে বলে মনে হয় না। তারা বড়–বড় আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছে। এস আলম যে আইনজীবী নিয়োগ করেছে তার বার্ষিক ফিস ৩০ মিলিয়ন ডলার বলে শুনেছি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুর সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। সবাই সহযোগিতা করছে। সিঙ্গাপুর সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশ যদি প্রমাণ করতে পারে অবৈধভাবে এখান থেকে অর্থ নিয়ে সম্পদ করেছে তারা নাগরিকত্ব বাতিল করবে। আলোচনার পাশাপাশি এসব বিষয়গুলো আমরা রাজনৈতিক সংবেদনশীল করার চেষ্টা করছি। রাজনৈতিক চাপ বাড়ানো ও যথাযথ প্রমাণ করতে পারলে অর্থ ফেরত আনা সহজ হবে। পাচারকারীদের অর্থ ফেরত আনতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×