ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

উদ্ভিদ

অদ্ভুত গাছ অক্টোপাস ট্রি

অদ্ভুত গাছ অক্টোপাস ট্রি

বলধা উদ্যানে ফুটেছে অক্টোপাস ট্রির ফুল। ছবি: লেখক

মৃত্যুঞ্জয় রায়

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫ | ০০:৫১ | আপডেট: ২১ মে ২০২৫ | ০৭:০১

অক্টোপাস সাগরের প্রাণী। সেই প্রাণীর নামে আবার গাছ! অদ্ভুত শোনালেও এ নামেই একটা গাছ আছে এই দেশে। অক্টোপাস ট্রির জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। কীভাবে কবে কে যে এই দেশে এনে একে লালনপালন করে বড় করেছে, কে জানে! ঢাকার ওয়ারীতে বলধা উদ্যানের সিবিলি অংশে প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতেই কেউ যদি মাথা তুলে ওপরে তাকান, তাহলে চোখে পড়বে অদ্ভুতদর্শন এ গাছ। ডালের শীর্ষে অক্টোপাসের বাহুর মতো ছড়িয়ে রয়েছে লম্বা সরু পুষ্পমঞ্জরি, তাতে গাদা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাল রঙের ফুল।

চৈত্রে একবার গিয়েছিলাম। তখনও দেখলাম, তাতে ফুল ফুটে রয়েছে। বৈশাখেও দেখলাম তার ফুল। ছাতার মতো ডালের মাথাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অপূর্ব বিন্যাসে সাজানো পাতা। গাছটা এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে, গড়নটা ছাতার মতো। তাই উদ্ভিদবিদরা এ গাছের ইংরেজি নাম রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ান আম্ব্রেলা ট্রি, অন্য নাম আইভি পাম। যদিও প্রকৃত পামগাছের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু অক্টোপাস ট্রি নামটা কেন হলো? পুষ্পমঞ্জরির দিকে তাকিয়ে সে নামের তাৎপর্য খুঁজে পেলাম। অক্টোপাসের দেহের চারপাশে বের হওয়া আটটি বাহু হয় অনেক লম্বা। এ গাছের পুষ্পমঞ্জরির একেকটি বাহু কখনও কখনও দেড় থেকে দুই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একটি বাহুতে এক হাজার ফুল ফোটাও বিচিত্র নয়। এত ফুল ফোটায় সেখানে মিছিল করে মধু খেতে আসে মধুপায়ী পতঙ্গ ও পাখিরা। এর ফল অনেক পাখি-প্রাণী, বিশেষ করে বাদুড়রা খায়। অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাঙারুদের পছন্দের খাদ্য এ গাছের পাতা।

অক্টোপাস ট্রি চিরসবুজ বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ। এ গাছ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। করতলাকার যৌগিক পাতা। একটি পাতায় সাধারণত ৭ থেকে ১৬টি পত্রক বৃত্তাকারে সাজানো থাকে। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম হেপ্টাপ্লিউরাম অ্যাক্টিনোফাইলাম (Heptapleurum actinophyllum, পূর্বনাম Schefflera actinophylla)। গোত্র অ্যারালিয়েসি। এর প্রজাতিগত নামের শেষাংশ অ্যাক্টিনোফাইলাম অর্থ বিচ্ছুরিত পত্রক। পাতাগুলো দেখলে সে রকমই দেখায়। মনে হয়, একটি বিন্দু থেকে পাতার বোঁটাগুলো চারদিকে সূর্যের রশ্মির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যেন সেগুলো ছাতার শিক, লম্বা ও সরু বোঁটার মাথায় পত্রফলক। গাছ বহু শাখায়িত, ডালের মাথায় ফুল ফোটে। একটি পুষ্পমঞ্জরিতে কুড়িটির মতো ছড়ায় ফুল ফোটে। মঞ্জরি ও ফুলের রং লাল। ফলের রং গাঢ় বেগুনি।

বীজ ও শাখা কাটিং করে এ গাছের চারা তৈরি করা যায়। যেখানে জন্মে, সেখানকার মাটিতে শিকড় বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। একবার কোথাও জন্মালে তা নির্মূল করা কঠিন। এ জন্য একে অনেকেই বলেন আগ্রাসী গাছ। এর কাঠ খুব শক্ত।

পাখিরা এর ফল খেয়ে দূরে নিয়ে যায় এবং বিস্তার ঘটায়। ফুল ফোটার ছয় সপ্তাহের মধ্যেই ফল হয়। বছরে গাছে দুই দফায় ফুল ও ফল ধরে। গ্রীষ্মের শুরুতে ধরে প্রথম দফায় এবং হেমন্তের শুরুতে দ্বিতীয় দফায়। গাছের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর হলে তাতে সাধারণত ফুল-ফল ধরে।

বলধা উদ্যানে গ্রীষ্মের শুরুতে ফুল ফুটতে শুরু করেছে অক্টোপাস ট্রিতে, থাকবে কয়েক মাস।

আরও পড়ুন

×