ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

গুম প্রতিরোধে সহায়তা করতে চায় জাতিসংঘ

গুম প্রতিরোধে সহায়তা করতে চায় জাতিসংঘ

.

 কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫ | ০১:০৪ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ | ০১:৩৩

গুম প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় জাতিসংঘ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সুরক্ষা এবং সুষ্ঠু তদন্তের ওপর জোর দিয়েছে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের (ডব্লিউজিইআইডি) প্রতিনিধি দল। গতকাল সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এ মত দেন।

চার দিনের সফরে গত রোববার ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোস্কা ও সদস্য আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ। 
বৈঠকের পর গ্রাজিনা বারানোস্কা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গুমের শিকার পরিবার, এনজিও, সরকারের বিভিন্ন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করব। গুমের শিকার পরিবার যাতে ন্যায়বিচার পায়, সেটিতে সহায়তা করা আমাদের লক্ষ্য। 

বাংলাদেশের সই করা আন্তর্জাতিক গুম সনদ এবং গুম কমিশনের তদন্ত নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিনিধি দলের সদস্য আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ বলেন, সনদ সইয়ের পর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা সফর করছি। কমিশন খুবই সফল তদন্ত করেছে। আমরা সার্বিক কাজকে সহায়তা ও শক্তিশালী করতে এসেছি। বিভিন্ন বিষয়ে আমরা এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছি। চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি। 

আইন উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার আমাদের তদন্তে আসতে অনুমতি দিয়েছে। এ মুহূর্তে আমাদের সফর করা সম্ভব নয়। কারণ, জাতিসংঘে আর্থিক সংকট চলছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে সরকার ও ডব্লিউজিইআইডি উভয়ের মধ্যে সহায়তার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ডব্লিউজিইআইডি প্রতিনিধি দল গুমবিষয়ক সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রশংসা করে। বিশেষ করে গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে (আইসিপিপিইডি) বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মানবাধিকার সমুন্নত, সুরক্ষা, প্রচার এবং ভুক্তভোগীর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের অটল সংকল্পের ওপর জোর দেন।

গঠন হবে গুমবিষয়ক শক্তিশালী স্থায়ী কমিশন
এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধবিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এই আইনের অধীনে গুমবিষয়ক শক্তিশালী স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে। ভবিষ্যতে কোনো সরকারের মদদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যাতে কেউ গুমের শিকার না হন, সে জন্য স্থায়ী কমিশন কাজ করবে। গতকাল সচিবালয়ে জাতিসংঘের গুম সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী দলের (ওয়ার্কিং গ্রুপ) সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
পরবর্তী সরকার আইনটি বাতিল করবে কিনা– এমন প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা যে সরকারই আসুক, তারা সব সময় এ বিষয়ে সোচ্চার ছিল। 

চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে বৈঠক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে গুমের অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। পরে তাজুল ইসলাম বলেন, গুমের বিচার করতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয় নিয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিধি দলকে বলেছি, গুমের বিচার অব্যাহত রাখতে আমরা প্রস্তুত। বিশেষ করে গুম হওয়া ভিকটিম এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়া খুবই প্রয়োজন। জবাবে তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন দিতে আগ্রহী। 
জানা গেছে, এক যুগ ধরে গুমবিষয়ক তদন্তে বাংলাদেশে আসতে চাইছিল ডব্লিউজিইআইডি। প্রথমে তারা ২০১৩ সালের ১২ মার্চ সফরের জন্য সরকারকে চিঠি দেয়। তবে তা আমলে নেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এবার অন্তর্বর্তী সরকার তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়েই জাতিসংঘের গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’ শীর্ষক দলিলে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বের ৭৬তম দেশ হিসেবে এটিতে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। 

আরও পড়ুন

×