ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ডিসেম্বরে বন্ধ এমআরপি বাড়ছে ই-পাসপোর্ট

ডিসেম্বরে বন্ধ এমআরপি বাড়ছে ই-পাসপোর্ট

প্রতীকী ছবি

 আছাদুজ্জামান

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫ | ০৩:৫৩

নিরাপদ ও দ্রুত ইমিগ্রেশনের কারণে বাংলাদেশিদের মধ্যে বেড়েছে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট গ্রহণ। বিদেশি ৮০ মিশনের মধ্যে বর্তমানে ৫৯টিতে চলছে ই-পাসপোর্ট সেবা। তিন মাসে নতুন আটটি ও ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলোতে চালু হবে সেবা। এরপর দেশের মতো মিশনেও মিলবে না মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি দেশে শুরু হয় ই-পাসপোর্ট ইস্যু। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার ৬০০টির বেশি চিপ-সংবলিত আধুনিক পাসপোর্ট ইস্যু করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এটি চালুর পর অধিদপ্তর গুটিয়ে আনছে ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এমআরপি কার্যক্রম। দেশে এমআরপি একেবারেই বন্ধ। দেশের বাইরে বাংলাদেশি যেসব মিশন ও দূতাবাসে চালু রয়েছে, তা বন্ধ করে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত এমআরপি ইস্যুর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন কোটির বেশি এমআরপি ইস্যু হয়েছে। দেশে নতুন করে কোনো এমআরপি হচ্ছে না। নবায়নে এলে, তাকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

বিদেশে চাহিদা পূরণে ২০২১ সালের আগস্টে জার্মানির বার্লিন দূতাবাসে চালু হয় ই-পাসপোর্ট অ্যান্ড অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট। এরপর থেকে এ পর্যন্ত বিদেশে বাংলাদেশি ৮০ মিশনের মধ্যে ৫৯টিতে পুরোদমে কার্যক্রম চলছে। ই-পাসপোর্ট চালুর সঙ্গে সঙ্গে এসব দূতাবাসে এমআরপি বন্ধ করা হয়েছে।

এমআরপিতে ৩৪টি থাকলেও ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রাখা হয়েছে ৩৮। চার আঙুলের ছাপের স্থলে ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের কর্ণিয়া ও বাহকের মুখমণ্ডলের ছবি ই-পাসপোর্টে সংরক্ষণ করা হয়। ই-পাসপোর্ট ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি এবং ৪৮ ও ৬৪ পাতার ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে এমআরপি ছিল শুধু ৪৮ পাতার পাঁচ বছর মেয়াদি। ই-পাসপোর্ট থাকলে ই-গেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো দেশে দ্রুত ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়।

জানা যায়, আগামী তিন মাসের মধ্যে মরক্কো, আলজেরিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান, পাকিস্তানের করাচি ও ইসলামাবাদে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম চালু করবে সরকার। বাকি মিশনে চলতি বছরের মধ্যেই ই-পাসপোর্ট চালু করে বন্ধ করা হবে এমআরপি।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নুরুস ছালাম সমকালকে বলেন, ‘দেশে আর এমআরপি ইস্যু হচ্ছে না। ডিসেম্বরের পর বিদেশি মিশনে শুধুই ই-পাসপোর্ট মিলবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন আটটি মিশনে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু করতে পারব আশা করছি। বাকি যেসব মিশনে এমআরপি চলছে, সেখানেও ডিসেম্বরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হবে।’

২৫ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন সিলেটের আব্দুস সবুর। এমআরপি বাতিলের পর তিনি ই-পাসপোর্ট নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সমকালকে আব্দুস সবুর বলেন, ‘লন্ডনে প্রথম এসে হাতে লেখা পাসপোর্ট নিই। মেয়াদ শেষে নবায়ন করতে গেলে বাধ্যতামূলক এমআরপি দেওয়া হয়। আমার মতো প্রবাসীর কাছে পাঁচ বছর পরপর এমআরপি নবায়ন একটু ঝামেলাই বলতে হবে। তবে বর্তমানে ই-পাসপোর্ট পেয়েছি। ১০ বছর নিশ্চিন্তে থাকতে পারব– এটি সত্যিই অন্যরকম অনভূতি।’

এমআরপিতে কৃষিকাজের ভিসা নিয়ে ২০১০ সালের শুরুতে ইতালির রোমে যান বরিশালের সাইফুল ইসলাম। সমকালকে তিনি এমআরপি করার তিক্ত এবং ই-পাসপোর্ট গ্রহণের সুখকর অভিজ্ঞতার কথা জানান। সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, আবেদন ফরম পূরণের আগেই দালাল তাঁর কাছ থেকে ব্যাংকের জমা ও কাগজপত্র সত্যায়িত করার কথা বলে হাতিয়ে নেন ২০ হাজার টাকা। পাসপোর্ট অফিসে দাঁড় করিয়ে রেখে লাপাত্তা হয়ে যান। পরে অন্য মাধ্যমে পাসপোর্ট করাতে সক্ষম হন।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে ঝামেলা ছাড়াই ১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট করেছি। এটি হাতে নিয়ে গর্বের সঙ্গে নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিই– এ অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।

আরও পড়ুন

×