ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

তিন বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নে দুর্নীতির অভিযোগ

তিন বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নে দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি-সংগৃহীত

 হকিকত জাহান হকি

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫ | ০১:১৬ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ | ০৯:৩৪

রাজশাহীর শাহ মখদুম, যশোর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নের নামে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। ওই তিন বিমানবন্দরের রানওয়ে কার্পেটিংয়ের জন্য ‘রানওয়ে সারফেসে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ’ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল সরকার। 

প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে নেমে ২২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার টাকা নয়ছয়ের প্রমাণ পেয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশও করেছে দুদকের অনুসন্ধান দল। তবে সুপারিশের এক মাস পরও দুদক সাতজনের নামে মামলা করতে পারেনি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কার্পেটিংয়ের জন্য ২০২২ সালে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে খরচ ধরা হয়েছিল ৫৬৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। পরে সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলীসহ ১০ ইঞ্জিনিয়ার ৪৯৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকার খরচ নির্ধারণ করেছিলেন। 

একই বছর দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫৪৫ কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় দেশি-বিদেশি দুটি কোম্পানি আবদুল মোমেন লিমিটেড ও মেসার্স চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তবে ওই সময় তিন বিমানবন্দরের কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়নি। 

পরের বছর ২০২৩ সালে ওই কোম্পানি দুটির পরামর্শে দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে দোহাই দিয়ে একই কাজের জন্য ৭৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্মাণ কোম্পানি ও মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে এ পর্যায়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। পরে এই টাকায় আবদুল মোমেন লিমিটেড ও মেসার্স চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়রিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। 
ডলারের দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে ৫৪৫ কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকার কার্যাদেশ ৭৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় বাড়িয়ে সরকারের ২২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার টাকা ক্ষতিসাধন বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে সাবেক বিমান সচিব মোকাম্মেল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রথম দরপত্রটি বাতিল করতে সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব করেছিলেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি বাতিল করেছিলেন। এর পরই পরস্পর যোগসাজশে অনৈতিকভাবে নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালে ২২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৭৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকার দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছিল। 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই দরপত্র-সংক্রান্ত ঘাপলা অনুসন্ধান করে সরকারের ২২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার টাকা ক্ষতিসাধন বা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। অভিযুক্ত হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীসহ সাতজনকে চিহ্নিত করা হয়। অন্যরা হলেন– বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোকাম্মেল হোসেন, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কিং চ্যাং লিয়াং, আবদুল মোনেম লিমিটেডের এ এস এম মঈন উদ্দীন, মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের আসিফ হোসেন জাবেদ ও ডব্লিউআইইটিসির ঝ্যাং শিচ্যাং। 

সূত্র জানায়, ওই তিন বিমানবন্দরের কার্পেটিং প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি দুদকে জমা পড়েছিল বছরখানেক আগে। তখন সাবেক বিমান সচিব মোকাম্মেল হোসেনের স্ত্রী আছিয়া খাতুন দুদকে কমিশনারের দায়িত্বে থাকায় অভিযোগটির নথি আটকে রাখা হয়েছিল। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পটপরিবর্তনের পর দুদকে আসে নতুন কমিশন। এই কমিশন অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু করে। পাঁচ সদস্যের বিশেষ দল অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুর্নীতির প্রমাণ পায়। অনুসন্ধান দল এক মাস আগে ওই সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিশনও মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চলছে কচ্ছপ গতিতে। 

দু’বার দরপত্র আহ্বান করে অভিযুক্তদের কারা কী অপরাধ করেছেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। 
দুদকের মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন সমকালকে বলেন, দালিলিকভাবে যদি প্রকল্পের অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রীর সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে তারা অভিযুক্ত হবেন। প্রকল্প অনুমোদন বরাদ্দ, বাস্তবায়নসহ নানা ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সেটি অনুসন্ধান দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। তিনটি বিমানবন্দর কার্পেটিং প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই তাদের অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

 

আরও পড়ুন

×