ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

প্রকৃতি

গাছপাগল কাদেরের ভেষজ সাম্রাজ্য

গাছপাগল কাদেরের ভেষজ সাম্রাজ্য

গাছ লাগিয়ে নিয়মিত যত্ন নেন আব্দুল কাদের- সমকাল

 লিমন বাসার, উত্তরাঞ্চল

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫ | ০১:১২

প্রায় দুই লাখ গাছ লাগিয়েছেন আব্দুল কাদের। সবই ভেষজ। বগুড়ার কাহালু উপজেলার ডোমনপুকুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। গ্রামের মানুষ চেনে ‘গাছপাগল কাদের’ হিসেবে।
আব্দুল কাদের সমকালকে বলেন, গাছের ভাষা বুঝতে শিখেছি। কোন গাছ কোন রোগ সারায়, সেটা মানুষের শরীর দেখে বুঝে ফেলি। বিনা পয়সায় মানুষকে গাছের রসের ওষুধ দিই। উপকার পায় বলে মানুষ আজও আসে।

ডোমনপুকুর গ্রামের সরু কাঁচা রাস্তায় হাঁটলে চোখে পড়ে পাতাবহুল গাছের ছায়া। নাকে আসে তুলসী, বাসক আর ঘৃতকুমারীর তীব্র গন্ধ। স্থানীয়রা জানান, রাস্তার দু’পাশের বড়-ছোট সব গাছ কাদের ভাই লাগিয়েছেন। সর্দি হলে তাঁর দেওয়া পাতার রস খান, শহরে যাওয়া লাগে না।
বয়স ৭৭ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর গতি, উদ্যম আর সেবা করার ইচ্ছা এখনও কিশোরের মতো। প্রায় পাঁচ দশক ধরে একা গড়ে তুলেছেন নির্জন ভেষজ সাম্রাজ্য, যার শিকড় ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামেও।

১৯৬৬ সালে ১৮ বছর বয়সে কাদের গাছ লাগানো শুরু করেন। তার পর আর থামেননি। সারাজীবন গাছের পেছনে ছুটেছেন। গাছ মানে ফুল বা ফল নয়, তাঁর কাছে গাছ মানে ওষুধ। প্রতিটি গাছের পাতা, ছাল, মূল সবকিছুর মধ্যে তিনি খুঁজে পান জীবন বাঁচানোর উপকরণ। কাহালু বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে তিন-চার কিলোমিটারজুড়ে যত গাছ দেখা যায়, এর বেশির ভাগ লাগিয়েছেন তিনি।
পেশায় তিনি পল্লিচিকিৎসক। ইউনানি মেডিকেল কলেজ থেকে শর্ট কোর্স করেছেন। কিন্তু তাঁর প্রধান পরিচয় গাছপ্রেমী হিসেবে।
বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে ডোমনপুকুর গ্রাম। সেখান থেকে দক্ষিণ দিকে ঢুকে যাওয়া রাস্তা ধরে এগোলে কাদেরের বাড়ি। রাস্তার দু’পাশে সবুজ ক্ষেত, ঝোপঝাড়। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর ক্ষেত চোখে পড়ার মতো। বাড়ির সঙ্গে শিমুল মূলের বাগানটিও কাদেরের ঔষধি গাছ। 
কাহালু হাসপাতাল, ডিগ্রি কলেজ, ডোমন প্রাথমিক বিদ্যালয়, মালঞ্চা কলেজ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, ফকির উদ্দিন স্কুল, বনানি কৃষি অফিস, ওয়াইএমসিএ, হামদর্দ কলেজ– সর্বত্র আছে তাঁর লাগানো ঔষধি বাগান।

বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের সর্দি-কাশি এক সপ্তাহে ভালো হয়েছে কাদের ভাইয়ের গাছের রসে। 
কাহালু ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মনিরুল বলেন, স্কুলের শিশুরা এখন গাছ চেনে, এটা আব্দুল কাদেরের অবদান।

স্থানীয় সাংবাদিক তানসেন আলম বলেন, ঔষধি গাছ লাগানো এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন কাদের।
কাহালু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আব্দুল কাদের একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। গাছ নিয়ে তাঁর ভাবনা এবং পরিশ্রম সত্যি অনুপ্রেরণামূলক। আমরা তাঁর কাজ সরকারি পর্যায়ে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। গ্রামের অনেকে চান, কাদেরের বাগান যেন সরকারিভাবে রক্ষা ও প্রসারিত করা হয়। তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হতে পারে স্থানীয় ভেষজ গবেষণা কেন্দ্র।

আরও পড়ুন

×