পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ মেনে নিতে আহ্বান ৬০ নাগরিকের

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫ | ২২:৫৩
ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্ঠনের প্রস্তাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন ৬০ নাগরিক। সোমবার বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ অন্তর্ভুক্ত করুন।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন- মানবাধিকার কর্মী আইরিন খান, আলোকচিত্রি শহিদুল আলম, শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর, অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান, অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠক ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. রুশাদ ফরীদি, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, ব্যারিস্টার মিতি ফারজানা, অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দীন প্রমুখ।
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দল এবং জোটের মধ্যে বিএনপিসহ ছয়টি চায় নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে রাজনৈতিক দলের মধ্যে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ ২০টি দল চায় সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। বাকি চারটি দলের অবস্থা স্পষ্ট নয়।
বিএনপি বলছে, সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের দুই তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বাধ্যবাধকতা থাকলে পিআর পদ্ধতি মেনে নেওয়া সম্ভব। অন্য দলগুলো বলছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মৌলিক সংস্কারের অংশ। এতে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ৬০ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি প্রধান রাজনৈতিক দল যেভাবে প্রস্তাব করেছে, সেভাবে যদি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন করা হয়, তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন আসবে না। ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে, সরকারের জবাবদিহিতা এবং ক্ষমতার ‘চেক অ্যান্ড ব্যাল্যান্স’- এ ভূমিকা রাখতে পারবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো দল যদি নিম্নকক্ষে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তবুও পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এছাড়াও কিছু ছোট দল সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়েও সংসদে আসন পাবে না, কিন্তু উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে। ফলে সরকার জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক উদ্যোগ নিলে বিরোধী দলগুলো কার্যকরী সংসদীয় প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে।
সীমিত ক্ষমতার উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাত্যহিক নির্বাহী কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়। উচ্চকক্ষ সংবিধান সংশোধন এবং যুদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয় ব্যতীত, আইন প্রণয়নে যাতে ভেটো দিতে না পারে। বিল এবং সরকারের সিদ্ধান্ত শুধু নিরীক্ষা এবং তদারকিমূলক কিছু ক্ষমতা পেতে পারে।
বিবৃততিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বারবার হুমকিতে ‘জয়ী সব পাবে’ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। ক্ষমতাসীনরা কখনও বিরোধী দলকে গুরুত্ব দেয়নি। বিরোধী দলগুলোও ধ্বংসাত্মক বাঁধা তৈরি করে জাতীয় স্বার্থ ঝুঁকিতে ফেলে। আমরা বিশ্বাস করি, পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ পারস্পারিক সহযোগিতা এবং আলোচনার নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।