বিশ্লেষণ
ঋতুদের সামনে বিশ্বকাপের হাতছানি

গোলাম রব্বানী ছোটন
গোলাম রব্বানী ছোটন
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ০১:৫১ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ১০:২৬
বছর দশেক আগে এই মেয়েদের নিয়ে যখন বয়সভিত্তিক দল গড়ি, তখন ওরা বেশ ছোট। ফুটবলের অনেক কিছু ওদের অজানা ছিল। সেই মেয়েরাই প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মঞ্চে নিয়ে গেছে বাংলাদেশকে। দূর থেকে বসে ওদের সাফল্য দেখে গর্বে বুকটা ভরে গেছে। এত বড় অর্জনে আমি এ মেয়েদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। এ দিনটির জন্যই আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। সত্যি বলতে কি, দক্ষিণ এশিয়ায় দু’বারের চ্যাম্পিয়ন আমাদের মেয়েরা খুব দ্রুতই এশিয়ান কাপে খেলার স্বপ্ন পূরণ করেছে। বলতে পারেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য এটা নবজাগরণ। আমি চেষ্টা করেছি ওদের গড়ে তুলতে। ওদের সামনে এখন বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে খেলার হাতছানি। এজন্য হাতে সময় কম, এর মধ্যে বড় দলগুলোর সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস ওদের সাপোর্ট দিতে পারলে বিশ্বকাপের দরজাও খুলে নেবে আমাদের মেয়েরা।
ঋতুর কথা একটু বলি, সেদিন ওর গোল দুটি ছিল দুর্দান্ত। খুবই ট্যালেন্টড প্লেয়ার এবং শুটিংয়ে অসাধারণ। ওর বাঁ পায়ে জাদু আছে। আমি যখন কোচ ছিলাম, তখন ও যদি ডি-বক্সের কাছাকাছি যেত আমি চিৎকার করতাম শুট, শুট। কারণ ওর শুটিং প্রতিভা সম্পর্কে আমার জানা আছে। সর্বশেষ সাফেও ওর করা বাংলাদেশের উইনিং গোলটি ছিল দুর্দান্ত। আর কালকের (বুধবার) দুটো ছিল চোখে লাগার মতো।
একটু পিছিয়ে গিয়ে যদি বলি, আমাদের আজকের এ সাফল্য কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্যের কারণে এসেছে। ২০১৫ সালে এই মেয়েরাই জিতেছিল অনূর্ধ্ব-১৪ সাফের শিরোপা। ধাপে ধাপে তারা অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬, ১৭, ১৮ সাফের শিরোপা জিতেছে। এরপর জিতেছিল সিনিয়র সাফের ট্রফি। ধারাবাহিকতা ছিল বলেই এ সাফল্য এসেছে। কালকে (বুধবার) যে মারিয়া মান্ডা, মনিকা চাকমারা খেলেছে, এরা কিন্তু নেপালে ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ সাফে খেলেছিল এবং দলকে চ্যাম্পিয়ন করে। আরেকটা জিনিস ছিল এই মেয়েদের খেলা নিয়ে কখনোই হতাশ ছিল না বাফুফে নারী ফুটবল কমিটি। যখন আমরা প্রথম শুরু করেছিলাম, ২০১০ সালে ভারতের কাছে ৬ গোল হজম করেছিলাম। ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ সালে এই ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও কেউই হতাশ হয়নি। নারী উইং সব প্লেয়ার একসঙ্গে রেখেছে। আর রেজাল্ট যেটাই আসত, তা নিয়ে হতাশা ছিল না। বলতে দ্বিধা নেই মাহফুজা আক্তার কিরণ সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিয়ে মেয়েদের জন্য কাজ করেছেন।
মেয়েরা ২০২৭ বিশ্বকাপ আর ২০২৮ অলিম্পিকের মতো আসরে খেলবে– এমন স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা নিতে হবে। একসময় আমাদের স্বপ্ন ছিল এশিয়ান পর্যায়ে সেরা প্রতিযোগিতায় খেলব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাই এর চেয়েও বড় স্বপ্ন আমাদের আছে। এশিয়ান কাপে ভালো করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা আছে ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ ঢাকা থেকে কোয়ালিফাই করেছিলাম। সেই প্রতিযোগিতার জন্য আমরা কোরিয়া, জাপান, চায়না, সিঙ্গাপুরে গিয়ে ট্রেনিং করেছি এবং ম্যাচ খেলেছি। তার পরও কিন্তু মূল পর্বে আমাদের রেজাল্ট ভালো আসেনি। থাইল্যান্ডে অভিজ্ঞতাটা সুখকর ছিল না। প্রথম খেলায় নর্থ কোরিয়ার কাছে ৮ গোলে হেরেছিলাম। হারলেও আমাদের দুঃখ ছিল না। কারণ আমরা জেনেছি প্রতিপক্ষরা আমাদের চেয়ে কতটা এগিয়ে। এশিয়ান কাপে অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানের মতো দলগুলো আছে। সেখানে ভালো করতে হলে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। আগামী মার্চে এশিয়ান কাপ, আমার মতে এখন থেকেই বড় দলগুলোর বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা কিংবা বিদেশি গিয়ে উন্নত মানের ক্যাম্প করা প্রয়োজন। আমরা যেহেতু প্রথম যাচ্ছি, তাই চেষ্টা করব ভালো করার। অস্ট্রেলিয়ায় যাব আশা নিয়ে, যদি কিছু না পাই, তাহলে হতাশ হলে চলবে না। কারণ এ তো মাত্র শুরু।
লেখক : সাফজয়ী নারী দলের সাবেক কোচ
- বিষয় :
- মতামত