ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

আজ বিশ্ব নদী দিবস

আজ বিশ্ব নদী দিবস

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২১:০৭

আজ বিশ্ব নদী দিবস। নদী রক্ষায় অনেক দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, 'ভাইরাসমুক্ত বিশ্বের জন্য চাই দূষণমুক্ত নদী।' এবার নদী দিবসে সারাবিশ্বে প্রায় এক হাজার কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল বিসি রিভারস ডে পালন দিয়ে। ১৯৮০ সালে কানাডার খ্যাতনামা নদীবিষয়ক আইনজীবী মার্ক অ্যাঞ্জেলো দিনটি 'নদী দিবস' হিসেবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিসি রিভারস ডে পালনের সাফল্যের হাত ধরেই তা আন্তর্জাতিক রূপ পায়।

২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে 'জীবনের জন্য জল দশক' ঘোষণা করে। সে সময়ই জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে, যা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবস পালিত হচ্ছে। দূষণে-দখলে মৃতপ্রায় নদী বাঁচাতে রোববার দেশের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

নদ-নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। ২৫ বছর মেয়াদি ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণও শুরু হয়েছে।

নদী অধিকার মঞ্চের সদস্য সচিব শমশের আলী বলেন, একাডেমিক আলোচনায় নদীকে লাইফ লাইন বলি, নদীকে বলি পরিবেশ-প্রতিবেশের একটা অবধারিত উপাদান, নদী হলো সম্পদ। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে নদী শাসন ও দখল-দূষণের বিষয়ে কথা বলা হয়। নদী থেকে কতটুকু দূরত্ব বজায় রেখে শিল্প কারখানা হবে তাও ঠিক করা হয়নি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নদী থেকে অন্তত এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো কলকারখানা স্থাপন করা যায় না। আমাদের দেশে নদীর পাড়েই সব হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে যতগুলো আইন আছে, সবগুলোই মূলত নদী শাসনকেন্দ্রীক। নদীর অধিকার এবং নদীর জীবন্ত সত্ত্বাকে স্বীকৃতি দিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আইন হয়নি। ফলে নদীকে কেন্দ্র করে যতগুলো কার্যক্রম হচ্ছে কোনো না কোনোভাবে সেগুলো নদীকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নদীর দখল ও দূষণ। যেটা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় ছোট ছোট নদী মরে যাচ্ছে। নদীর বিষয়ে ১৯৮২ সালের পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ আইন ও আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহ আইন-১৯৯৭ নামে দুটি আন্তর্জাতিক আইন আছে। এই দুটি আইনের মধ্যে অনেক ভালো দিকনির্দেশনা আছে। বাংলাদেশ সরকার যদি দুটি আইনে সাক্ষর করে এবং তার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো নিয়ে এবং ওই দুটি আইনের লক্ষ্য ধারণ করে আইন তৈরি করে তাহলে হয়তো আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে পারবো। শমশের আলী বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ এবং নদীকেন্দ্রীক আমাদের যে সভ্যতা ও সমাজ গড়ে উঠেছিল সেটাকে পুর্নজীবিত করতে নদী বাঁচানো দরকার। তাছাড়া সারা বিশ্বে এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে, পরিবেশ-প্রতিবেশের অন্যতম উপাদান হচ্ছে নদী এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ। সুতারাং এটিকে অক্ষত রাখা দরকার।

বর্তমানে নদ-নদী রক্ষায় কাজ করছে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা ও দখল রোধে প্রধান দায়িত্ব পালন করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীপাড়ের বন্দরগুলো দেখভালের দায়িত্ব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। আর নদীর দূষণ ঠেকানোর কাজে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সর্বশেষ নদীর দখল ও পরিবেশদূষণ ঠেকাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাদের নেতৃত্বে নদী রক্ষায় সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘একটি বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেছি, দখলদারদের তালিকা করেছি। সকল জেলায় এখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে গেছে। একটি জবাবদিহিতার জায়গা নদী রক্ষা কমিশন। সবার সহযোগিতা পেয়েছি। দেশের প্রচুর মানুষ নদী নিয়ে কাজ করছে। তাদেরকে সংগঠিত করাই কমিশনের কাজ। নদীর প্রবাহ বাধা দিলেই বিচার হবে, ১৮৯৮ সালেই আইন ছিল। আরও অনেক আইন আছে। কিন্তু আইনগুলোর ব্যবহার, প্রয়োগ প্রায় ভুলে গেছেন প্রয়োগকারীরা। আদালত এই কাজ সহজ করে দিয়েছে। সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নদীর আশেপাশে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের কাছে আসতে হবে। নদীর ক্ষতি হলে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। নদী বাঁচানো সংসদীয় কমিটির সদস্যদের এটি ফান্ডামেন্টাল জব। তাদেরকেই এই কাজ করতে হবে।’

আরও পড়ুন

×