পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দু'একদিনের মধ্যে রেড এলার্ট

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ | ০৯:০০
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় পলাতক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের হোল্ডিংয়ের ঠিকানা হাইকোর্টকে জানিয়েছে দুদক। এখন যে কোনো দিন তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে ইন্টারপোল। সেটা দুই একদিনের মধ্যেই হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী।
এদিকে পি কে হালদারের কোম্পানিতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত ভুক্তভোগী চার ব্যক্তি হাইকোর্টে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যে কোনো মূল্যে টাকা ফেরত পাবার আর্জি জানান তারা। ভুক্তভোগীদের একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রয়োজনে তার সম্মাননা বাতিল করুক তবুও টাকা ফেরত দেয়া হোক। আদালত বক্তব্যগুলো লিখিত চেয়েছেন।
মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত (ভার্চুয়াল) হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেজাবীন রাব্বানি দিপা ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
রোববার আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নেন পিকে হালদারের পিপলস লিজিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ বিনিয়োগকারী। যাদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের বড় মেয়ে ড. নাশিদ কামাল, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শওকত উর রহমান ও ক্যান্সারে আক্রান্ত সামিয়া বিনতে মাহবুব। তারা জীবনের শেষ সম্বলটুকু ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানান। এ সময় তারা পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও অর্থপাচারের ঘটনায় অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
মামলার ধারাবাহিকতায় রোববার আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে কানাডায় অবস্থানরত প্রশান্ত কুমার হালদারের পাঁচটি ঠিকানা উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশান্ত কুমার হালদার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। পরে মানি লন্ডারিং আইনে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি মামলা করে দুদক।
এতে আরও বলা হয়, বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করা হয়। পরে ইন্টারপোল থেকে কতিপয় তথ্যাদি সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়। ইতিমধ্যে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া আসামি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে রেড এলার্ট নোটিশ জারির নিমিত্তে মামলার এফআইআর এর নোটারিকৃত ইংরেজি কপি ও পূরণকৃত রেড নোটিশ ড্রাফট ফর্মসহ সম্ভাব্য দেশগুলোদে তার অবস্থান তথ্যাদি প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ থেকে চাওয়া তথ্যাদি ইতিমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলা তদন্তকালে বিভিন্ন গোপন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অবন্তিকা বড়াল ও শংখ বেপারী নামে দুই ব্যক্তির নামে-বেনামে প্রশান্ত কুমার হালদার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, তদন্তকালে মামলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দলিলপত্র, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাছাড়া আদালতের অনুমোদনক্রমে পি কে হালদারের নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির নামে অর্জিত প্রায় ৪৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫৮টি ব্যাংক হিসাব ও ১৭টি কোম্পানির শেয়ার হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। মামলা সংশ্লিষ্ট আরও রেকর্ডপত্র সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।
ডিএজি এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করবে। সেটি করলে পৃথিবীর ১৯৪টি দেশের যে কোনো দেশেই পি কে হালদার থাকুক না কেন তা জানা যাবে। তবে কানাডায় তার একটি ঠিকানা পাওয়া গেছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, রোববার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। শুনানি শেষে চার ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীদের এই মামলায় পক্ষভুক্ত করে আদেশ দিয়েছেন আদালত। দু-একদিনের মধ্যে রেড এলার্টও জারি হবে।
- বিষয় :
- পিকে হালদার
- দুদক