'আমৃত্যু গণতন্ত্র ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন'

সাংবাদিক নেতা ও সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ- ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২২ | ০৭:৩৭ | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২ | ০৮:০৪
'বরেণ্য সাংবাদিক নেতা ও সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আমৃত্যু গণতন্ত্র এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ শুধুমাত্র একজন দেশপ্রেমিককে হারালো না, বরং সাংবাদিকরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার এবং স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জনানো সম্ভব হবে।'
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক নাগরিক শোকসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এ শোকসভার আয়োজন করে।
বিএফইউজের সভাপতি এম. আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং ডিইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম এবং সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপি নেতা ও সাবেক ডাকসুর জিএস খায়রুল কবীর খোকন, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান,জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসান হাফিজ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক রফিকুর রহমান,ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুদ্দিন নূরু, বিএফইউজের নির্বাহী পরিষদ সদস্য এ কে এম মহসীন, ডিইউজের সহ-সভাপতি বাছির জামাল ও রাশেদুল হক প্রমুখ।
শুরুতে কোরান তেলাওয়াত করেন বিএফইউজের সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন। সভা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের কর্মময় জীবন স্মরণ করে বলেন, 'বিভিন্ন সময় জাতির সংকটময় মুহূর্তে তিনি অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দালনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে তার মতো একজন দায়িত্বশীল, পরিশিলীত ও সাহসী মানুষের বড়ই প্রয়োজন। রিয়াজ ভাই পথ দেখিয়েছেন, কিভাবে সংকট মোকাবিলা করতে হয়।' এ সময় তিনি মরহুম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'যারা সব সময় সত্যের পক্ষে কথা বলতে পারেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সেরকম একজর মানুষ। তার মতো মানুষ বর্তমানে বিরল।'
বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, 'ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন অগ্রভাগের সৈনিক। তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। সাংবাদিকতা ছিল তার প্রাণ। সাংবাদিকতার মধ্য দিয়েই তিনি জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন।' তিনি বলেন, 'রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ দেশ, জীবনধর্মী এবং গণতন্ত্রবাদী সাংবাদিকতার নেতৃত্ব দিয়েছেন।'
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, 'যারা দেশকে ভালোবাসতেন, জাতীয়তাবাদী ঘরানার পরিচিত ছিলেন, বর্তমান দুঃসময়ে তারা একে একে চলে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিবিসির সাংবাদিক সিরাজুর রহমান, শিক্ষাবিদ ড. পিয়াস করিম। সর্বশেষ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি অভিযোগ করেন, 'দুঃসহ স্বৈরশাসন মানসিক চাপ সৃষ্টি করে বলেই তারা অসময়ে চলে গেছেন।' রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের দুইটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'তিনি ছিলেন দ্রৌপদী আর আধুনিক চরিত্রের সমাহার।' দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এর থেকে উত্তরণে সাংবাদিকদের ভূমিকার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, 'সাংবাদিকদের কলম ও কণ্ঠ অব্যাহত থাকলেই রিয়াজ ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।'
সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজের সভাপতি এম. আবদুল্লাহ বলেন, 'রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে সাংবাদিকরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।' তিনি বলেন, 'মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার লড়াই সাহসের সঙ্গে চালিয়ে যেতে পারলেই রিয়াজ ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব।'
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ দেশে সাংবাদিকতা প্রসারে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ভূমিকা স্মরণ করে বলেন, 'সাংবাদিকতাকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন সফল। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন মুক্তমনের দেশপ্রেমিক। যারা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, রিয়াজ ভাই লেখনীর মাধ্যমে তাদের অনুপ্রেরণা দিতেন।'
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, 'বিভক্ত ফোরাম ও বিভক্ত ইউনিয়নের নেতা হয়েও রিয়াজ ভাই ছিলেন সবার নেতা। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি যেমন ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিলেন, তেমনি বর্তমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনেও তিনি থাকতেন সামনের সারিতে। তার মৃত্যু সংবাদপত্র এবং রাষ্ট্রের জন্য বড় ক্ষতি।'
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান শেষ জীবনে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মনোকষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, 'বিভিন্ন সময় আলাপচারিতায় গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরা নিয়ে রিয়াজ ভাইয়ের প্রবল আক্ষেপ দেখা গেছে।'
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, 'রিয়াজ ভাই গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যে আন্দোলন করে গেছেন, তা অব্যাহত রাখতে হবে।'