ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

যুদ্ধদিনের ৫ বীরকন্যাকে সংবর্ধনা দিয়েছে 'চেষ্টা'

যুদ্ধদিনের ৫ বীরকন্যাকে সংবর্ধনা দিয়েছে 'চেষ্টা'

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২ | ২৩:০৪ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ | ২৩:০৪

একাত্তরের ডিসেম্বরে কাজের সন্ধানে বের হওয়া স্বামী আবু মিয়ার খোঁজে বাংলামটরের পশ্চিম দিকে হাঁটতে থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে রিজিয়া বেগম। কিন্তু স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার আগেই রিজিয়া বেগমের উপর পরে পাকিস্তানি সেনাদের থাবা। পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে ২০ থেকে ২৫ জন মেয়ের পাশাপাশি তার উপরও পাশবিক নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি সেনারা। তিন দিন পর ১৬ ডিসেম্বর সোনারগাঁও হোটেলের সামনে জঙ্গলে কাদা পানি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় একজন বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা রিজিয়াকে উদ্ধার করেন।

সিলেটের হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে দুই মাসের গর্ভবতী সন্ধ্যা রাণী ঘোষ স্বামী হরি ঘোষের সঙ্গে হবিগঞ্জের আদাউর বাপের বাড়ি আসেন। সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে দু মাস জঙ্গলে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাননি তিনি। পালানোর সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে ঠিকই ধরা পড়ে যান সন্ধ্যা।

হাইস্কুলের সামনে জঙ্গলে নিয়ে যায় তাকে। ভয়ে জ্ঞান হারায়। অজ্ঞান অবস্থায় পাকিস্তানি সেনারা তার উপর নির্যাতন চালায়। এরপর উত্তর গ্রামের শহিদ মিয়া নামে এক বৃদ্ধ জঙ্গল থেকে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। চিকিৎসা করান। সেবার সন্ধ্যা প্রাণে বেঁচে গেলেও নষ্ট হয়ে যায় তার গর্ভের সন্তান।

মহান মুক্তিযুদ্ধে রিজিয়া, সন্ধ্যার মতো দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। মঙ্গলবার একাত্তরে নির্যাতনের শিকার এমন পাঁচ বীরকন্যাকে সংবর্ধনা দিয়েছে বেসরকারি নারী সংগঠন ‘চেষ্টা’। রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের ঈগল হলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেকের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, অর্থ এবং উত্তরীয় হিসেবে লাল-সবুজের শাল তুলে দেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, কষ্টের অর্জনই বাংলাদেশ। বীর কন্যারা সে অর্জনের ভাগীদার। তাদের ত্যাগ যারা দেখেনি তারা উপলব্ধি করতে পারবেনা। তাদের সম্মান জানাতে পারাটা আমাদের সৌভাগ্য। চেষ্টার এই প্রচেষ্টা সাধুবাদ পাওয়ার মতন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিরোধী দলের চিপ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, বীরকন্যাদের অনেকেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। অনেককে আমরা খুঁজে পেয়েছি। তাদের জীবনযাপনের কথা শুনেছি। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের সম্মান জানাতে হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, বঙ্গবন্ধু একাত্তরের বীরঙ্গনা নারীদের বলেছিলেন, তোমার সন্তানের বাবার পরিচয় যদি দিতে না পার বাবার জায়গায় আমার নাম লিখে দাও। ঠিকানা লিখে দাও ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। এখন বীরকন্যাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদানের পাশাপাশি একটি ঘর দেয়া হবে। এতদিন সম্মানের ভয়ে তারা মুখ খুলেননি। এখন পরিচয় দেয়ায় যাচাই-বাছাইয়ে অনেক জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

‘চেষ্টা’র সভাপতি লায়লা নাজনীন হারুণ বলেন,  আমরা চেষ্টা’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেছি। তাদের মধ্যে অনেকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। কোনো বীরকন্যা যদি অনাহারে, অনাদরে থাকেন আমরা সেই সংবাদ পাওয়া মাত্র সেখানে ছুটে যাব। তারা যেন সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারেন সেই লক্ষ্যে কাজ করব।

সংবর্ধনাপ্রাপ্ত ৫ বীরকন্যা হলেন কুমিল্লার নূরজাহান বেগম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিজিয়া বেগম, জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার চিনারচর গ্রামের মোসা. সামছুন নাহার, মোসা. রঙমালা খাতুন ও হবিগঞ্জের সন্ধ্যা রানী ঘোষ। এসময় অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেয় চেষ্টা’র সদস্যরা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চেষ্টার উপদেষ্টা লে. জেনারেল এম. হারুণ-অর-রশিদ, বীরপ্রতীক প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×