গণশুনানিতে বিশেষজ্ঞরা
পথবাসীদের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে স্বাবলম্বী করতে হবে

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২২ | ০৯:১৮ | আপডেট: ৩১ মে ২০২২ | ০৯:১৮
বিভিন্ন কারণে মানুষ শহরে এসে গৃহহীন হয়ে ভাসমান অবস্থায় রাস্তায় থাকেন। এসব মানুষ সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। এছাড়া এভাবে শহরমুখী হওয়ার কারণে শহরের ওপর চাপ বাড়ছে। এ ধরনের পথবাসীদের জন্যে সরকার নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এখন এসব মানুষকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে স্বাবলম্বী করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘নগরের দরিদ্র অসহায় পথবাসীর সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক গণশুনানিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা।
জাতীয় সংসদের ‘সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ (এপিপিজি)’ ও এনজিও সংস্থা ‘কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, বাংলাদেশ’ এর আয়োজন করে।
এপিপিজির সভাপতি শিশির শীলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন— সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। এছাড়া গণশুনানিতে বক্তব্য রাখেন— সংসদ সদস্য ও সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত, সংসদ সদস্য ও সংসদের দলিত এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, সংসদ সদস্য ও সংসদের দলিত এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম, সমাজসেবা অধিদপ্তর মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম এবং কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ফিওনা ম্যাকলিসাট।
আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ‘গ্রাম হবে শহর’। এর আগে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই কন্যা সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। নগরে বিশেষ করে ঢাকায় যেসব বস্তি রয়েছে, সেগুলো কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের জমিতে অবস্থিত। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী লোক সেটি দখল করে ভাড়া দেয়। যখন জায়গার প্রয়োজন হয়, তখন বস্তি খালি করতে হয়। বস্তির তো নির্দিষ্ট সময় নেই। যে কোনো সময় উচ্ছেদ হতে পারে। কিন্তু বস্তিবাসীদের কী হবে?
তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে, কাউকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হলে একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা লাগে। কিন্তু বস্তি অবৈধ বিধায় সেটি সম্ভব হচ্ছে। কেননা বস্তির মানুষেরা আজ এইখানে তো কাল অন্যখানে। এ অবস্থায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ কিংবা অন্যান্য ভাতাসহ নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে প্রধানমন্ত্রী গ্রামে গৃহহীনদের জন্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এই প্রকল্পের আওতায় খাস জমিতে গরিব অসহায়দের বাড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। যখন খাস জমি পাওয়া যাবে না, তখন সরকার দুই থেকে তিন শতাংশ জমি উপকারভোগীর নামে কিনে বাড়ি করে তার কাছে হস্তান্তর করবে।
তিনি বলেন, সামনে আদমশুমারি শুরু হচ্ছে। পথবাসীদের উচিত নিজ এলাকায় গিয়ে আদমশুমারিতে অংশগ্রহণ করা। তাহলে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আশ্রয়ণ প্রকল্প- দুটোই পাবেন। সরকার চায় এসব ভাসমান মানুষ গ্রামে ফিরে যাক।
আরমা দত্ত বলেন, আজ মানুষ তার দাবিগুলোর কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারছেন, পথবাসীরা অনেক কষ্টে থাকেন। গ্রামে নানা কারণে মানুষকে শহরমুখী হতে হচ্ছে। কিন্তু মানুষকে তাদের ঘরে ফিরে যেতে হবে। কারণ দিন দিন শহরের কর্মসংস্থানও সংকুচিত হচ্ছে। এসব মানুষের সমস্যার সমাধানে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি, তাদের সমস্যার সমাধান হবে।
আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, পথবাসীদের সমস্যার সমাধান হয়তো রাতারাতি হবে না। পথবাসীদের সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে। কেউ গৃহহীন থাকবেন না।
ফেরদৌসী ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের সব মানুষকে নিয়ে এগোতে চান। তিনি চান শহরের গৃহহীন মানুষগুলো গ্রামে ফিরে গিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়ন করুক।
শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, দেশের কেউ পিছিয়ে থাকবে না। পথবাসীরা যদি পিছিয়ে থাকে, তাহলে দেশের উন্নয়ন পূর্ণতা পাবে না।
ফিওনা ম্যাকলিসাট বলেন, বিভিন্ন কারণে জীবন ধারণের সহায় সম্বল হারিয়ে মানুষ শহরে আসেন এবং বস্তি এলাকায় বাস করেন। এসব মানুষের উন্নয়নে সরকাররের সঙ্গে অন্য এনজিওগুলোও কাজ করছে। কিন্তু এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। বাংলাদেশ দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এসব মানুষের জন্যে গৃহিত সরকারি প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে শিশির শীল বলেন, গণশুনানিতে মানুষের দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে প্রেরণ করা হবে। আশা করছি, আপনাদের দাবিগুলো পূরণ হবে।
- বিষয় :
- গণশুনানি
- সুযোগ-সুবিধা
- গৃহহীন
- গ্রাম
- স্বাবলম্বী