বিনামূল্যের টিকা নিতে দিতে হয় ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২২ | ০৯:২৫ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ | ০০:৫৫
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে সরকারি টিকা দিতে ৯ মাসের ছেলে জারিফকে নিয়ে দক্ষিণ বনশ্রী থেকে এসেছেন মা আয়েশা বিনতে ইসলাম। এর আগেও এই কেন্দ্রে এসে ছেলেকে চারটি টিকা দিয়েছিলেন আয়েশা। প্রতিবারই টিকা দিতে গুনতে হয়েছে ৫০ টাকা। কেন্দ্রটি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরও টিকা নিতে ৫০ টাকা করে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়- এমন অভিযোগ বহু পুরোনো।
মূলত নারী-শিশু ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে আছে নারী মৈত্রী সেবা সংস্থা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন। সপ্তাহে দু'দিন রোববার ও বুধবার এ কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়। শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের সাতটি টিকা নিতে হয়। প্রতিদিন এই কেন্দ্রে গড়ে ৫০ থেকে ১০০টি শিশু টিকা নিতে আসে।
গত সোমবার উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা রুম্পা ওই কেন্দ্রে শিশুর টিকা দিতে এলে তাঁর কাছেও ৫০ টাকা নেওয়া হয়। কর্মকর্তাদের কাছে তিনি জানতে চান বিনামূল্যের টিকা নিতে কেন ৫০ টাকার দিতে হবে। কর্মকর্তারা বলেন, 'এই টাকা সবার কাছ থেকেই নেওয়া হয়। এটা টিকার দাম নয়, সার্ভিস চার্জ। আমাদের এখানে চারজন চিকিৎসক ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। পরিচালনা ব্যয়ও বলতে পারেন।'
রুম্পা বলেন, 'সরকার এই টিকা সারাদেশে ফ্রিতে দিচ্ছে। আপনারা কেন টাকা নিচ্ছেন। যদি টাকা নিতেই হয় তাহলে আমাকে টাকার রসিদ দিতে হবে। তারা রশিদও দিচ্ছে না। তাহলে কিসের সার্ভিস চার্জ। এটা একটি সরকারের নিবন্ধনভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এটা অবশ্যই বেআইনি।'
টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, শিশুদের যেসব টিকা দেওয়া হয় সবই এই কেন্দ্রে পাওয়া যায়। সরকারি টিকাগুলো ফ্রি দেওয়া হয়। এজন্য সরকার থেকে আমরা কিছু টাকা পাই। তবে সার্ভিস চার্জ বাবদ ৫০ টাকা নেওয়া হয়। এটা প্রতিষ্ঠানের চার্জ হিসেবে। এই টাকা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে খরচ করা হয়।
কবে থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেছেন জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ নিতে নির্দেশ দিয়েছে, যে কারণে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে নির্দেশনার চিঠি বা প্রজ্ঞাপন চাইলে তা দেখাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।
নারী মৈত্রী সংস্থার পরিচালক মো. আকরামুল হোসাইন বলেন, ইপিআইর আওতাভুক্ত টিকা বিনামূল্যে দেওয়ার নিয়ম। টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার পরও কেউ টাকা নিলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশে এই টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। এই টিকার জন্য টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।