আলোচনা সভায় বিশিষ্টজন
গণতন্ত্র কর্তৃত্ববাদে রূপ নিয়েছে

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার 'নির্বাচন পূর্ব বাংলাদেশ :রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিধর্ম' শীর্ষক আলোচনা সভারয় বক্তব্য দেন অধ্যাপক এম এম আকাশ - সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৭:৫৮
দেশে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। গণতন্ত্র এখন কর্তৃত্ববাদে রূপ নিয়েছে। ভোটের মাধ্যমেই এ অবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। 'নির্বাচন-পূর্ব বাংলাদেশ : রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিধর্ম' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজন এ কথা বলেন। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ আলোচনার আয়োজন করে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন।
বক্তারা বলেন, দেশে উন্নয়ন হয়েছে, তার স্বীকৃতি দিতে হবে। তবে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে বৈষম্য বেড়েছে। বৈষম্যের কারণে সংকটও বেড়েছে। ধনী ও গরিবের মধ্যে উন্নয়নের ব্যবধান দৃষ্টিকটু। দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও অনেক ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন অধ্যাপক শফী আহমেদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. বাহারুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফ ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ প্রমুখ।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, 'উন্নয়ন মানুষের চোখে পড়ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, আমি নিজে কী পেলাম। দেশে গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু আমি তো ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ধনী-গরিব আয়-ব্যয়, শিক্ষা, চিকিৎসায় বৈষম্য বেড়েছে। আজ পার্লামেন্টে অধিক সংখ্যক ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা যেভাবে চান সবকিছু সেভাবে হয়েছে। আগে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবারের দু'জনের বেশি থাকতে পারতেন না, এখন চারজন করেছে।' তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হতে হবে। জামায়াত-বিএনপির ভয়ে নির্বাচন দেব না, তা হবে না। দেশের সব মানুষ যদি বিএনপিকে চায়, তাহলে সেটি মেনে নিতে হবে। তবে মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে এবং ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বারবার সরকারকে বোঝাতে হবে যেন গণতন্ত্রের অপব্যবহার না হয়।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানুষ তো একটাই ভোট দেবে। অর্থনীতির কী উন্নয়ন হলো, সামাজিক বিষয় ও রাজনীতি সবকিছু চিন্তা করে ভোট দেবে। তবে উন্নয়নের স্বীকৃতি দিতে হবে। উন্নয়ন শুধু এক সরকারের আমলে নয়, ধারাবাহিকভাবে হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে, তবে তা বৈষম্যও বাড়িয়েছে। বৈষম্যের ফলে সমাজে চাহিদা কম সৃষ্টি হয়। সমাজে মধ্যবিত্ত যত হবে, চাহিদাও বেশি হবে।
অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, ধনী-গরিবের মধ্যে আয়, সম্পদ, শিক্ষা ও চিকিৎসায় বৈষম্য দৃষ্টিকটুভাবে বাড়ছে। বাজার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ধনীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। রাষ্ট্র তাদেরই সেবা করছে। ধনী এগোচ্ছে খরগোশের গতিতে আর গরিব এগোচ্ছে শামুকের গতিতে। নানা উন্নতির পরও বাংলাদেশের মানুষ অসন্তুষ্ট। কারণ, সমতা ও সুশাসনের অভাব। ভবিষ্যতে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নতির ধারা বৈষম্যহীন এবং টেকসই নাও হতে পারে।
এম এম আকাশ আরও বলেন, বড় দু'দলই দেশে অনুগত গণতন্ত্র চালাতে ইচ্ছুক। মানুষ একজনের কর্তৃত্ব অস্বীকার করলে আরেকজনের কর্তৃত্ব আসবে। সংসদ সদস্য পদের মনোনয়নে নির্ধারিত হচ্ছে অগণতান্ত্রিকভাবে, টাকাপয়সা ও স্বজনপ্রীতি এবং সচরাচর শীর্ষ কর্তৃত্বের মাধ্যমে। এখানে কালো টাকাও ক্ষমতার অংশ হয়ে গেছে।